জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দ্রুত সমাধান চায় বিএনপি। এজন্য সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব সমর্থন করেছে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। নেতারা মনে করেন, গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত সংসদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে। সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, বৈঠকে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রস্তুতি এবং প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। খুব শিগগিরই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে বেশির ভাগ আসনে একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল (সবুজ সংকেত) দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। চলতি মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
ওই নেতা আরও বলেন, মনোনয়নের প্রক্রিয়াটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই দেখভাল করছেন। ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটি তাঁর ওপর এ দায়িত্ব দিয়েছে। যাচাইবাছাই শেষে তিনিই প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবেন। সে কাজ চলমান রয়েছে। জানা গেছে, বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের বক্তব্য নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একযোগে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্থায়ী কমিটি মনে করে, সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যা বলেছেন এবং যে বিষয়গুলো তুলে এনেছেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী। এজন্য তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা।
সূত্রমতে, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকের আলোচনার সারাংশ স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছেন। এরপর স্থায়ী কমিটিতে তা নিয়ে বিশেষ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে একই সঙ্গে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গণভোটের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। রেফারেন্ডামের (গণভোট) যে আর্টিকেল ১৪২ ফ্যাসিস্ট সরকার উড়িয়ে দিয়েছিল, সেটা হাই কোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন হয়েছে। ফলে সংবিধান বা অন্যান্য জাতীয় ইস্যুতে গণভোট করা যাবে না, এমন কোনো বিধান নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের যে আলোচনা বা প্রস্তাব এসেছে, সেটি যৌক্তিক। সরকার এখন অধ্যাদেশ জারি অথবা আরপিওতে সংশোধন এনে গণভোট পরিচালনা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিতে পারে। নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে এ গণভোটের আয়োজন করতে পারে। এতে একই অর্থ ব্যয়, একই লজিস্টিকস, একবার ভোট সেন্টারে যাওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ভার্চুয়ালি), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।