বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক। আমরা আশা করি, সরকার তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে এবং দেশের জন্য একটি সুষ্ঠু, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে।’
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৮ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এর আগে সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের ‘বিতর্কিত’ সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি। তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় অমানবিক নির্যাতন করা হয়। সেই সরকার সম্পর্কে তারেক রহমানের মূল্যায়ন জানতে এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ভাই, আমরা তো সামনে যেতে চাই। আপনি পেছনে কেন যাচ্ছেন? দেশকে সামনে নিতে হবে। তবে ওয়ান-ইলেভেন সরকার সম্পর্কে এক বাক্যে বা সংক্ষেপে যদি বলতে হয়, এক-এগারোর সরকার তো একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি সরকার ছিল।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে তারা সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল। দেশকে একটি অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেখেছি, খুব সম্ভবত তাদেরই ভিন্ন আরেকটি রূপ। সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতা-কর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন তারেক রহমান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা দিল্লিতে গেছেন এবং সেখানেই আছেন। ফলে ভারতের সঙ্গে একটা সম্পর্কের শীতলতা দেখা গেছে এক বছর ধরে। যেমন জনসাধারণের যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে, ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা রকম, আপনারা সরকারে এলে সেই ক্ষেত্রে কি অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে বা পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন? এমন প্রশ্নে ভারত সম্পর্কে বিএনপি ও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ভারত যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সঙ্গে শীতল থাকবে। সুতরাং আমাকে আমার দেশের মানুষের সঙ্গেই থাকতে হবে। এবার ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আপনাদের নীতি কী হবে? জবাবে তারেক রহমান বলেন, আমাদের কাছে সবার আগে বাংলাদেশ। এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন। এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। বিষয় তো হচ্ছে, বাংলাদেশ আমার কাছে আমার স্বার্থ। আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখব। আমার দেশের স্বার্থ দেখব। বাংলাদেশের স্বার্থের প্রসঙ্গে আপনি বলছেন যে, পানির হিস্সা চাওয়া এবং সীমান্ত হত্যার বিষয়টি নিয়ে আপনারা সোচ্চার থাকবেন? তারেক রহমান বলেন, না না, আমি উদাহরণ দিয়ে বললাম। দুটো উদাহরণ দিয়ে বোঝালাম যে আমাদের স্ট্যান্ডটা কী হবে। আমরা আমাদের পানির হিস্সা চাই। অর্থাৎ আমার দেশের হিস্সা, মানুষের হিস্সা আমি চাই, আমি হিসাব চাই। আমার যেটা ন্যায্য সেটা আমি চাই। অবশ্যই ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমি বোঝাতে চেয়েছি যে আমার মানুষের ওপরে আঘাত এলে অবশ্যই সেই আঘাতকে এভাবে আমি মেনে নেব না।
অপর এক পশ্নের জবাবে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, সরকার তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে এবং দেশের জন্য একটি সুষ্ঠু, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি তো রাজনৈতিক, কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। প্রথম থেকেই বলেছি, আমরা চাই এই অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক। কিছু সংস্কারের বিষয় আছে। একই সঙ্গে প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বাধীন নির্বাচনের বিষয়ও আছে। আমরা আশা করি, তারা তাদের মূল দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পাদন করবে। এ সময় লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নিয়েও কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) অত্যন্ত স্বনামধন্য ও বিজ্ঞ মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছে। তিনি আমার কাছে জানতে চান, জনগণ আমাদের সুযোগ দিলে আমরা দেশের জন্য কী পদক্ষেপ নেব? দেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে আমাদের কিছু পরিকল্পনা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কার্যক্রমের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার মানে তো ক্ষণস্থায়ী বিষয়। একটি বিশাল জনবহুল দেশ পরিচালনা করতে জনগণের ম্যান্ডেটসহ শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজন।
বিড়ালটি আমার মেয়ের : কয়েক দিন আগে বিড়ালের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের খুনসুটির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, বিড়ালটি আমার মেয়ের। ও এখন অবশ্য সবারই হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই ওকে আদর করি। আমি এবং আমার ভাই যখন ছোট ছিলাম আমাদের একটি ছোট কুকুরও ছিল। এমনকি তখন আমাদের বাসায় আম্মা হাঁস-মুরগি পালতেন, ছাগলও ছিল আমাদের বাসায়। উনি ছাগলও কয়েকটি পালতেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা চিন্তা করি, আমাদের আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন।