বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্পর্ক এখন নতুন দিগন্তে দাঁড়িয়ে। সৌদি আরবের বিশাল বিনিয়োগ তহবিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি কেবল বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙা করবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কও জোরদার করবে। বেসরকারি খাত শক্তিশালী করবে সৌদি বিনিয়োগ।
গতকাল রাজধানীর হোটেল শেরাটনে সৌদি-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসবিসিসিআই) আয়োজিত ব্যবসায়িক শীর্ষ সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
সম্মেলনে পণ্য প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রদর্শনীতে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি, আবুল খায়ের গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপ, অ্যাপেক্স, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংকসহ ২৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন পণ্য ও সেবার তথ্য নিয়ে স্টল দেয়।
এদিকে তিন দিনের ব্যবসায়িক সম্মেলনে যোগ দিতে সোমবার বিকালে ২০ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ ওমর আবদুলহাফিজ আমিরবকশ, যিনি মাজদ আল উমরান গ্রুপের কর্ণধার। এসবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব-পশ্চিম) ড. মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন, আল তাইবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খালিদ আল হারবি, হেলিওপার্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মাইকেল সাসেন, কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ সালাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-সৌদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। সৌদি ৫-১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী। প্রধান খাত কৃষি, আইটি, ফার্মাসিউটিক্যাল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা এখন একটি কৌশলগত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের নতুন গন্তব্য হতে পারে বাংলাদেশ। আমাদের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির ধারা অবিচল এবং বেসরকারি খাত এ প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি।’ তিনি বলেন, ‘আমার বিনীত পরামর্শ হলো সৌদি সরকারি ও বেসরকারি খাত এবং অন্য বিনিয়োগকারীদেরও বাংলাদেশে আসা উচিত। বাংলাদেশ এখন প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এবং ধীরে ধীরে ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগের জন্য এখনো উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদি বিনিয়োগ জ্বালানি, বস্ত্র এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উভয় দেশের বেসরকারি খাত যদি সহযোগিতা করে, তাহলে সুবিধা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক কর্মী এখনো অদক্ষ বা আধাদক্ষ। অতএব এই কর্মীদের বিকাশ, পুনর্দক্ষতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তরুণ ও দক্ষ শ্রমশক্তি, যারা গার্মেন্টস থেকে আইটি পর্যন্ত প্রতিটি খাতে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। সৌদি কোম্পানিগুলো শ্রমনিষ্ঠ ও দক্ষতানির্ভর খাতে বিনিয়োগ করলে দুই দেশই উপকৃত হবে।’
শেখ ওমর আবদুলহাফিজ আমিরবকশ বলেন, ‘বাংলাদেশের কারখানা ও ব্যবসায়ীরা আমাদের দেশ ও জনগণের জন্য বিশাল পরিশ্রম ও অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের জন্য সৌদিতে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। কারণ আমাদের মধ্যে রয়েছে বহু সম্পর্ক। আমরা একই মতাদর্শে বিশ্বাসী, একই ধর্মীয় ধারায়, একই রকম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে যুক্ত। আমাদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কও দীর্ঘদিনের এবং সৌদি আরব এ দেশ (বাংলাদেশ) থেকে আগত শ্রমশক্তি থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হয়েছে।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দেশের এ সিদ্ধান্ত প্রশংসার দাবিদার। একটি কঠিন সময়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা এক হয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের ধর্ম ও সংস্কৃতির মিল থাকায় আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসার।
রেমিট্যান্স ও জনশক্তি ছাড়া এত দিন আর কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক আমাদের মধ্যে ছিল না। এ উদ্যেগের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসা আরও প্রসারিত হবে।’