বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূরীকরণে প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল ইতালির রোমে বিশ্ব খাদ্য ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান বক্তার বক্তৃতায় তিনি এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো- (১) ক্ষুধা ও সংঘাতের চক্র ভাঙতে যুদ্ধ বন্ধ করে সংলাপ শুরু করুন এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করুন; (২) এসডিজি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ, জলবায়ু কর্মে আন্তরিকতা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা গড়ে তোলার অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করতে হবে; (৩) সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল ও ধাক্কা মোকাবিলায় সক্ষম করার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করতে হবে; (৪) তরুণ ও নারী উদ্যোক্তা, কৃষি ও প্রযুক্তি খাতে উপযুক্ত অর্থায়ন ও অবকাঠামোসহ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরি; (৫) বৈশ্বিক বাণিজ্য যেন খাদ্য নিরাপত্তাকে বাধা না দেয়- সেজন্য রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে হবে এবং (৬) গ্লোবাল সাউথ ও গ্রামীণ তরুণদের জন্য প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ছোট ভূমির দেশ। আয়তনে ইতালির অর্ধেক। কিন্তু ১৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষের খাবারের জোগান দিচ্ছে। পাশাপাশি আশ্রয় দিচ্ছি ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে, যারা মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, যা আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। আমরা বিশ্বের শীর্ষ ধান, শাকসবজি ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। আমাদের কৃষকরা ফসল চাষের ঘনত্ব ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন। আমরা ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি। আমরা কৃষি খাতে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়েছি। শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। শিশুদের খর্বতা কমেছে, খাদ্য তালিকা বৈচিত্র্যময় হয়েছে মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার মাধ্যমে। কৃষি আরও সবুজ হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, ২০২৪ সালে সারা বিশ্বে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ আমরা পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করি। এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়- এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা, এটি এক নৈতিক ব্যর্থতা। আমরা যখন ক্ষুধা দূর করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে পারিনি, তখনই বিশ্ব অস্ত্রের পেছনে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মুনাফাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কোটি কোটি মানুষকে পেছনে ফেলে গেছে। আমাদের নতুন ধরনের ব্যবসা প্রবর্তন করতে হবে- সামাজিক ব্যবসা, যা ব্যক্তিগত মুনাফাহীন কিন্তু সমস্যা সমাধানে নিবেদিত। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে দরিদ্র নারীরাও হতে পারেন সফল উদ্যোক্তা। গ্রামীণ ডানোন শিশুদের পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে লড়ছে। বিশ্বের নানা দেশে গড়ে ওঠা অন্যান্য সামাজিক ব্যবসাও মানুষ ও সমাজকে ক্ষমতায়িত করছে। এগুলো তত্ত্ব নয়- বাস্তব উদাহরণ। এর আগে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কু ডংইউ।