সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে না পারায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাই কোর্ট। পরে তদন্ত শেষ করতে শেষবারের মতো ছয় মাস সময় দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ নতুন এ সময় দেন। এর আগে হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত টাস্কফোর্স তদন্তে আরও ছয় মাস সময় চেয়ে আবেদন করে। তবে বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনে করেন, টাস্কফোর্সের এ সময় চাওয়া অযৌক্তিক। তিনি বলেন, ‘এতে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।’
২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাই কোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে বিভিন্ন বাহিনীর অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়ে এ টাস্কফোর্স গঠন করতে বলা হয়েছিল। টাস্কফোর্স গঠনের পর ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন আদালত। পরে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে তদন্ত শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় বাড়িয়ে দেন হাই কোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সংশ্লিষ্ট হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বাদীপক্ষে শুনানি করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
শুনানিকালে শিশির মনির হাই কোর্টকে বলেন, ‘আপনারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে সময় দিয়েছিলেন। একটি হাই পাওয়ার টাস্কফোর্স করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেটা গঠিত হওয়ার পরেও তারা প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। তাই তাদের (টাস্কফোর্স কমিটি) তলব করুন।’ এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, ‘তারা কাজ করছে। কাজ শেষ হলেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। সময় লাগবে।’
শিশির মনির বলেন, ‘তারা সময় চাইলে আবেদন দিয়ে আদালতকে জানাক। তারা যে কিছু কাজ তার কিছুই আমরা জানি না। আমাদের জানাক।’ এ সময় আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, ‘কাজের অগ্রগতি আছে কি না প্রয়োজনে আপনাদের জানাতে পারে।’ তখন আরশাদুর রউফ বলেন, ‘আমাদের বলার আছে কিছু। হাই কোর্টের অর্ডারের পর টাস্কফোর্স হয়েছে। এখানে অফিসার পরিবর্তন হয়েছে। এটা টাফ কেস। ওনারা কাজ করছেন। র্যাব-পুলিশ হেডকোয়ার্টারও সঙ্গে আছে। এটা দ্রুত শেষ হবে। এটা একটা ওল্ড কেস। সরকার এটার তদন্তে গুরুত্ব দিচ্ছে। তদন্ত শেষ করতে আমরা আরও ছয় মাস সময় চাচ্ছি।’ শিশির মনির বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ একই কথা একই বিতর্ক আগেও করেছে। সারা দেশে এ মামলাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।’
এ সময় হাই কোর্ট বলেন, ‘এ নিয়ে তথ্য প্রচারের বিষয়টি কন্টিনিউ করতে হবে, এজন্য যে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটা করতে হবে, শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।’ তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আমরাও চাই এটা হোক, শেষ সময়ের মধ্যে হোক।’ তখন চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে হাই কোর্ট বলেন, ‘কিন্তু আর কত বছর লাগবে? এখন তদন্তের কত পারসেন্ট এগিয়েছেন? পলিটিক্যালি যে-ই আসুক এ মামলার অগ্রগতি তো হবে না। সে যে-ই আসুক।’ তখন রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, এ মামলার অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছেন, অনেক তথ্যপ্রমাণ দরকার, এজন্য সময় দরকার।
এ সময় মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজিজুল হককে আদালতের ডায়াসের সামনে ডেকে নেওয়া হয়। তাঁর কাছে মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চান হাই কোর্ট। মামলার তদন্ত কত পারসেন্ট এগিয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ নতুন করে সময় চাওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, ‘আমরা শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।’ এরপর আদালত এ মামলার তদন্ত শেষ করতে টাস্কফোর্সকে শেষবারের মতো ছয় মাস সময় দেন।