ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দোকানপাট ভাঙচুর ও ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। আহত হন অন্তত ৩০ জন। গতকাল বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মনোনয়ন পরিবর্তনের
দাবিতে সড়ক অবরোধ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি প্রার্থীকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন বঞ্চিত তিন নেতা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে প্রতিনিধি জানান ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় দুই প্রার্থীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। গতকাল বিকালে বোয়ালমারী উপজেলার ওয়াপদা মোড়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খোন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থকরা অবস্থান নেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওয়াপদা মোড় এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে খন্দকার নাসিরের লোকজন ধাওয়া দিয়ে ঝুনু গ্রুপের নেতা-কর্মীদের হটিয়ে দেয়। এ সময় উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা ১৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয় সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি দোকান। ঝুনু গ্রুপের সমর্থকরা পার্শ্ববর্তী হারুন কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়লে নাসির গ্রুপের লোকজন সেখানেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে। দুই গ্রুপের মাঝে হামলা-পাল্টা হামলার কারণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় এক ঘণ্টা সময় ধরে চলে সংঘর্ষ। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫-৩০ ব্যক্তি আহত হন। উপজেলা যুবদলের সভাপতি লিপন মিয়া গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুনের খবর পেয়ে বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে এলে বিক্ষুব্ধ লোকজনের বাধায় ফিরে যান। পরে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ রিপোর্ট লেখার সময় বোয়ালমারী পৌর এলাকাজুড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক টিম টহল দিচ্ছিল।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করি। এ সময় বিএনপি ঝুনু গ্রুপের সমর্থকরা অতর্কিতভাবে আমাদের মিছিলের ওপর হামলা চালায়। তারা ককটেল বিস্ফোরণসহ আমাদের নেতা-কর্মীদের মেরে আহত করে।’
?উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা বলেন, ‘ঝুনু গ্রুপের কর্মসূচি সকাল ১০টায় ঘোষণা দেওয়া হয়। এ কারণে আমরা বিকালে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলাম। তারা সকালের কর্মসূচি থেকে সরে এসে বিকালে আমাদের মিছিলের ওপর হামলা চালায়। আমাদের নেতা-কর্মীদের মেরে আহত করে।’ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়। এ সময় আমাদের প্রায় ৩০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের পার্টি অফিসেও ভাঙচুর চালায় তারা। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে।’
ফটিকছড়িতে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহারের অনুসারীরা। গতকাল সন্ধ্যায় শত শত নেতা-কর্মী চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সাধারণ জনগণসহ বাবুনগর মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষেরা দুর্ভোগের শিকার হন। এর আগে বিকালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সরওয়ার আলমগীর ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আজিম উল্লাহ বাহার পৃথকভাবে বিল্পব ও সংহতি দিবসের প্রোগ্রাম পালন করেন।
প্রসঙ্গত রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গত সোমবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর। এই আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহারসহ পাঁচজন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি প্রার্থীকে বয়কটের ডাক বঞ্চিত তিন নেতার : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক এমপি মো. আমিনুল ইসলামকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন একই আসনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত তিন নেতা। বৃহস্পতিবার রাতে নাচোল রেলস্টেশনে অনুষ্ঠিত সভায় বঞ্চিত প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে আমিনুল ইসলাম এমপি হয়ে সংসদে গিয়ে তৎকালীন হাসিনা সরকারকে বৈধতা দেয়।