শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নাফিসা কামাল

রণক ইকরাম

চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নাফিসা কামাল

বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন পৌঁছে গেছে অন্যরকম উচ্চতায়। অগ্রগতি হয়েছে নারী ক্রিকেটেরও। কিন্তু আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে নারী সংগঠক বা উদ্যোক্তা বলতে কেউ নেই। এক বছর বিরতি দিয়ে আবারও শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের পেশাদার টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট লিগ বিপিএল। তৃতীয় আসরে যোগ হয়েছে নতুন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এবারের আসরে একমাত্র নারী চেয়ারম্যান নাফিসা কামাল। তিনি নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা লিজেন্ড লিমিটেড থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়েছেন তৃতীয় আসরে। প্রথম দুটি আসরে সিলেট রয়্যালসের চেয়ারম্যানও ছিলেন নাফিসা। পরিকল্পনামন্ত্রী ও আইসিসির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের কনিষ্ঠ কন্যা নাফিসা কামালের ইচ্ছা- বাবার ইচ্ছাটাকে অনেক দূর টেনে নেওয়া। বলেছেন তার লাইফস্টাইলের গল্পও। লিখেছেন- রণক ইকরাম

 

 

আপাদমস্তক ফ্যাশনেবল- স্মার্ট একজন। প্রথম দেখায় ভুল করে কেউ টেলিভিশন বা সিনেমার নায়িকা ভাবতে পারেন তাকে। সত্যিই কী কখনো নায়িকা হতে চেয়েছিলেন নাফিসা কামাল? প্রশ্ন করতেই মৃদু হাসলেন ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত সংগঠক বিপিএলের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারম্যান। বললেন- ‘নাহ। সেরকম ইচ্ছা কখনোই হয়নি। তবে ক্রিকেট খেলার প্রতি ঝোঁক ছিল। কিন্তু নানা কারণে খেলোয়াড় হতে পারিনি। তাতে অবশ্য কষ্ট নেই। বাবার সূত্র ধরে ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত হয়েছি। চেষ্টা করছি ব্যবসা গুছিয়ে নেওয়ার। আর ক্রিকেটের সম্পৃক্ততার বিষয়টি তো এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই জড়িয়ে গেলাম।’

পরিকল্পনা মন্ত্রী, আইসিসি ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে হিসেবে গর্ব হয় তার। ক্রিকেট কিংবা ব্যবসা অথবা ব্যক্তিগত জীবনের নানা আবদার সবকিছুতেই নাফিসার সঙ্গী তার বাবা।

এত কিছু থাকতে ক্রিকেটের সঙ্গে কেন জড়ালেন? চ্যালেঞ্জটাই বা কেমন? প্রশ্ন করতেই আবারও বাবা প্রসঙ্গ টানলেন নাফিসা। জানালেন, ‘আসলে বাবার কারণেই এত দূর আসা। সেই ছোট্টবেলা থেকে বাবার হাত ধরে বিশ্বের নানা স্টেডিয়াম চষে বেড়িয়েছি। আসলে আমাদের পুরো পরিবারের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ক্রিকেট। ক্রিকেট আমাদের কাছে সন্তানের মতো। আব্বুর কথাই ধরা যাক। উঠতে-বসতে-খেতে কেবল ক্রিকেট আর ক্রিকেট। বাংলাদেশের খেলার সময় বাবা হয়তো কোথাও ব্যস্ত। সেখান থেকেও একটু পরপর ফোন খেলার কী অবস্থা? উইকেট ক’টা পড়ল... ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন ক্রিকেটবান্ধব পরিবেশে বেড়ে উঠলে ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকে উপায় আছে? আর চ্যালেঞ্জটা নিয়েই মাঠে নেমেছি। সাফল্য আসবেই।’

কিন্তু একজন নারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হয় না? একটু থামলেন নাফিসা। প্রশ্নটা সম্ভবত তার মনোপূত হয়েছে। জবাবে বললেন, ‘আমরা যতই মুখে বলি না কেন আমাদের নারীরা আক্ষরিক অর্থেই পিছিয়ে আছে। নারী হিসেবে ক্রীড়া সংগঠকের কাজ করতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। অন্যদের চেয়ে ডাবল কিংবা ট্রিপল ইফোর্ট দিয়েও অনেক সময় কাজ হচ্ছে না। এখনো যখন কোনো মিটিং কিংবা ইভেন্টে যাই, দেখা যায় হলরুম জুড়ে আমি একাই মেয়ে। তখন বুঝতে পারি আমার এই সেক্টরটাতে আমি আসলেই একা। তবে একটা কথা না বললেই নয়, মানুষের ভালোবাসা কিংবা সম্মানের জায়গাটা ঠিক পেয়েছি। ক্রিকেটারদের সঙ্গেও একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা কিন্তু খারাপ নয়।’

তাকে সবাই সুন্দরী বলে। বলে তিনি অনেক ফ্যাশনেবলও। কিন্তু যাকে নিয়ে এত কথা তার কী অভিমত? ‘সবাই হয়তো ভালোবাসার কারণে বলে। তবে এটা ঠিক আমি চেষ্টা করি নিজের মতো চলার। এটা যদি কারও কাছে সুন্দর আর ফ্যাশনেবল মনে হয় তাহলে আমি কী বলব?’

 

 

কিন্তু আপনার কাছে ফ্যাশনের সংজ্ঞা কী? জবাবে নাফিসা বললেন, ‘কমফোর্টেবল মানানসই যে কোনো কিছু নিজের মতো ক্যারি করাটাই ফ্যাশন।’

নাফিসার সব ধরনের পোশাকেই আগ্রহ রয়েছে। ব্যবসা আর ক্রীড়াঙ্গন সামলাতে হয় বলে বেশির ভাগ সময়ে তাকে ওয়েস্টার্ন আউটফিটে দেখা যায়। তবে নাফিসা জানালেন, পোশাকের ব্যাপারটা নির্ভর করে কোথায় কী উদ্দেশ্যে যাওয়া হচ্ছে তার ওপর। ব্যবসা আর প্রতিদিনের ব্যস্ততার কারণে রান্নাবান্নার জন্য তেমন একটা সময় পান না। তবে দেশীয় রান্নায় তার হাত কিন্তু বেশ পাকা। বললেন, ‘আসলে পড়াশোনার জন্য বিদেশ ছিলাম। তখন দেশি খাবার খুব মিস করতাম। মূলত তখনই নিজের চেষ্টায় রান্না শিখেছিলাম। তবে এখন খুব একটা করতে পারি না।’ জানালেন, বাইরে অনেক কিছু খাওয়ার অভ্যাস থাকলেও প্রিয় খাবার ডাল-ভাত।

কেমন লাগে ব্যবসা-ক্রিকেট আর চারপাশের ব্যস্ততা?

‘ভালোই লাগে। তবে এসবের কিছুই কিন্তু আমার কাছে নতুন নয়। বাবাকে দেখে বাবার আদর্শে বড় হয়েছি। তাই ছোটবেলা থেকেই এসব নিজের মধ্যে ছিল। আমি শুধু বাবার ভাবনাটুকু টেনে নিয়ে যেতে চাই অনেক দূর।’

অবসর খুব বেশি মিলে না। এরপরও নাফিসা কামালকে সিনেমার পোকা বলা চলে। সব ধরনের ছবি দেখতেই পছন্দ করেন তিনি। আর বিশেষ করে শাহরুখ খানের অনেক বড় ভক্ত তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাই ঘুরতে তার বেশ ভালোই লাগে। তবে ইদানীং এসে ব্যবসা কিংবা অন্যান্য কাজ ছাড়া খুব একটা বেড়ানো হয় না।

বাংলাদেশের ক্রীড়া সংগঠকদের মধ্যে নাফিসা কামালের বাবা মুস্তফা কামাল উলে­খযোগ্য একজন। আবাহনী ক্রীড়াচক্র থেকে শুরু করে বিসিবি আইসিসি পর্যন্ত পেয়েছে তার ক্রীড়াপ্রেমের পরশ। ক্রিকেট নিয়ে কখনো হতাশ হননি মুস্তফা কামাল। বাবার মতোই যেন একই পথে হাঁটছেন নাফিসা কামাল। বিপিএলের গত দুই আসরে সিলেট রয়্যালসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন নাফিসা কামাল। এবার নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা লিজেন্ড লিমিটেড থেকে দল নিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স নামে। দলের নামকরণের পেছনেও রয়েছে তার ক্রিকেটপ্রেমী বাবার গল্প। নাফিসা বলেন, আমি কুমিল্লার মেয়ে। দাদাবাড়ি কুমিল্লায়। আমার বাবা বড় হয়েছেন ওখানে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়েছেন তিনি। তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে কলেজে। ওটার সঙ্গে মিলিয়ে আমরা দলের নাম রেখেছি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। নাফিসা জানালেন, ক্রিকেটের মাধ্যমে কুমিল্লাকে সারা পৃথিবীর বুকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। ‘মারলন স্যামুয়েলস কিংবা সুনীল নারিনের মতো ক্রিকেটার যখন কুমিল্লার নাম উচ্চারণ করেন তখন সত্যি অনেক ভালো লাগে।’

বিপিএলের মাধ্যমেই শুধু ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন না নাফিসা। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বছরজুড়ে ক্রিকেটে অবদান রাখতে চান তিনি। পাশাপাশি পরিচালনা করতে চান সামাজিক কর্মকাণ্ডও। নাফিসা বলেন, ‘কুমিল্লায় কিছু এতিমখানা আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ও কোম্পানির অধীনে হচ্ছে সেটা। ওখানকার ছেলেমেয়েদের মাঝে শিক্ষা পৌঁছে দিতে, উৎসাহ দিতে সেখানে ক্রিকেটার নিয়ে যাব আমরা।’

বাবা রাজনীতিবিদ, তাই মেয়ে হিসেবে সেই ছোঁয়াটা তার মধ্যেও আছে। তবে এখনই নয়, সময় সুযোগ আর পরিস্থিতি বুঝে সেখানেও অবদান রাখতে চান নাফিসা কামাল। মোটকথা তার বাবার যে কর্মকাণ্ড, যে চিন্তা-চেতনা বা অগ্রযাত্রা সেটা ধরে রাখতে চান নাফিসা। এগিয়ে নিয়ে যেতে চান আরেক প্রজম্ন পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর