ফুলের সঙ্গে সাজের খুব ভাব। পরিপূর্ণ একটি সাজ পেতেও ভরসা পছন্দসই ফুলের ওপর। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই বাঙালিয়ানা সাজের সঙ্গী হয়েছে গোলাপ, গাঁদা, বেলি, গাজরার মালা, রজনীগন্ধা, জারবারাসহ বাহারি সব ফুল। আর তাইতো বাঙালি সাজের ঐতিহ্য বলা যায় ফুলের ব্যবহারকে। বর্ষবরণের সাজে ফুল একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালি সত্তার প্রধান এই উৎসবে নারীরা সাজবে আর ফুলের উপস্থিতি থাকবে না তা ভাবা যায় না। এবারের বৈশাখে হরেক রকম ফুলেল সাজে চুলের বাহার থাকতে পারে আপনারও।
প্রথমেই আসি খোলা চুলের কথায়। শাড়ির সঙ্গে খোলা চুলে ফুলের ব্যবহার আলাদা দ্যোতনা সৃষ্টি করে। যারা সারা দিন ঘোরাঘুরিতে খোলা চুলে ফুলের সাজের কথা ভাবছেন তাদের জন্য কিছু কথা। খোলা চুলে ফুল জড়িয়ে নিলে অল্পতেই টিপটপ লাগে। তবে চুল যেন এলোমেলো না হয়ে যায় সেজন্য ফুলের মালা দিয়ে চুল পেঁচিয়ে নিতে পারেন। গ্রীষ্মের গরমে আপনার কষ্টও কম হবে আবার চুল থাকবে পরিপাটি। যাদের চুল সিল্কি, তাদের জন্য অবশ্য খোলা চুলে কস্ট আরও কম। চুলগুলো কাঁধের একপাশে ঘুরিয়ে নিন। মাঝে মাঝে হাত দিয়ে চুল পরিপাটি করে নিলেই দিনভর আপনি থাকবেন গোছাল। আপনার পরনে থাকা শাড়ি বা থ্রিপিসের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিছু ফুল নিলে পুরো বিষয়টি আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। যাদের চুল তুলনামূলক খাটো তাদের জন্য খোলা চুলের বিষয়টি আরও সহজ। তারা অনায়াসে খোলা চুলে ফুল গুঁজে দিনভর কাটিয়ে দিতে পারবেন।
কারও কারও কাছে খোলা চুল সামলানো বড্ড কষ্টের। তাদের জন্য অবশ্য চিন্তার কিছু নেই। পছন্দসই একটি খোঁপা করে নিলেই হলো। গরমের দিনে খোঁপা খুবই আরামদায়ক চুলের সাজ। খোঁপা জুড়ে ফুল লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ধাঁচে চুলকে টুইস্ট করে খোঁপায় ফুলের ব্যবহার পুরো লুকটায় বদলে দেবে। খোঁপায় ব্যবহারের জন্য গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, বেলি, গাজরা ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন ফুল উপযুক্ত। মাথার ওপর ফুলিয়ে করা খোঁপার চারপাশে ছোট ছোট গোলাপ আটকে দিলে বেশ সুন্দর লাগবে। এ ছাড়াও পুরো খোঁপা বেলিফুলের মালা দিয়ে ঢেকে দিলেও ভালো লাগবে। সাদা, গোলাপি, কমলা, হলুদসহ নানান রঙের ফুল কানের পাশে গুঁজে দিলে মনোরম হবে। এমন সাজে তাজাফুলের পাশাপাশি কাপড়, প্লাস্টিক ও ফাইবারের তৈরি ফুলও স্থান করে নিয়েছে। এগুলো দেখতে বাস্তব ফুলের মতোই। খোঁপার পাশাপাশি ঝামেলাবিহীন চুলের সাজে বেণি অত্যন্ত ফ্যাশনেবল। বয়সভেদে বেণি হতে পারে নানান ধরনের। সাধারণ একটি বেণিতে পুরোটায় ফুল দিয়ে জড়িয়ে নিতে পারেন। আবার বেণির খাঁজে জারবেরা বা জিনিয়া ফুল গুঁজে দিলে ভিন্ন লুক আসবে। টিনেজাররা করতে পারেন ফ্রেন্স বেণি অথবা রাফ বেণি। আজকাল চুলের সাজে বহুরকম বেণির দেখা মেলে। ইউটিউবেও মেলে বাহারি বেণির টিউটোরিয়াল। তাই সহজেই পেয়ে যাবেন পছন্দের একটি বেণি স্টাইল। তবে বেণি যেমনই হোক পুরো বেণিতে ফুলের মালা ব্যবহার করতে পারেন। বেণির গোড়ায় ৮ থেকে ১০টি বেলী ফুলের মালা আটকে দিলে সৌন্দর্য যাবে অনেকখানি। আবার শুধু গাজরা লাগালেও ভালো লাগবে। একটু ভিন্নতা আনতে চাইলে বেলী ফুলের সঙ্গে বেণির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটু পরপর ছোট ছোট গোলাপ আটকে দিলে ভালো লাগবে। ঝামেলাবিহীন ফুলের সাজে সম্প্রতি ফুলের মুকুটের কদর বেড়ে গেছে খুব। যে কোনো জাতীয় উৎসবে ফুলের মুকুটই মেয়েদের প্রথম পছন্দে পরিণত হয়েছে। চুল যেভাবেই রাখুন না কেন, পছন্দের একটি পুষ্পমুকুট নিয়ে মাথায় পরিয়ে নিলেই হলো। আজকাল উৎসবে শামিল হলে প্রায় মেয়েরই এটি চাই।
এই দিনে শুধু বড়রা নয় সাজবে ছোট মেয়েটিও। নববর্ষে ফুলেল সাজ থেকে বঞ্চিত হবে না সেও। সোনামণির চুল লম্বা হলে খোঁপা বেঁধে বা বেণি করে মালা জড়িয়ে দিতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে ফুলগুলো যেন ভালোভাবে তার চুলে আটকে থাকে। নইলে কিছু সময় যেতে না যেতেই ফুল খসে পড়বে। তাছাড়া বাচ্চারা স্বভাবতই সাজের যত্ন কম বোঝে। তার সাজে ফুলের পরিমাণ রাখতে হবে কম। ভারী হয়ে গেলে তাদের জন্য কষ্টকর। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ফুলের সাজে সবচেয়ে সুবিধা হলো, ফুলের মুকুট করে মাথায় পরিয়ে দেওয়া। আর কোনো ঝামেলায় থাকল না।
ঝটপট রেডি হওয়া বা খুব সকালে বের হয়ে উৎসবস্থলে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে আগের রাতেই পছন্দসই ফুল কিনে সংগ্রহে রাখতে পারেন। গোলাপ, রজনীগন্ধা ডাটাসহ একটু চিনির পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পরদিন সকালে বেশি সতেজ থাকবে। আর যে কোনো মালা বা গাজরা কিনলে পলিথিনে ভরে ফ্রিজের নরমালে রাখুন। সকালে মনের মতো করে সাজিয়ে নিন আপনার চুল। এবার সতেজ লুকে বেরিয়ে পড়ুন সবাইকে নিয়ে ঘোরাঘুরি বা আড্ডা জমাতে।