হাল আমলে ফ্যাশনের টিউন বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যুক্ত হচ্ছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর রূপ। তারই ধারাবাহিকতায় বাঙালিয়ানা ফ্যাশন এগিয়ে যাচ্ছে ওয়েস্টার্ন আউটফিটকে সঙ্গে রেখে। অনেক আগে থেকে আমাদের পোশাকের তালিকায় যুক্ত হওয়া এই আউটফিটের ব্যবহার উপযোগিতা বাড়ানো নিয়ে চলছে বিশেষজ্ঞদের নানা বিশ্লেষণ। তাই তো ফ্যাশনসচেতন নারী ও বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এসব পোশাকের চাহিদা অনেক। বলা যায়, ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পোশাক সংস্কৃতি এখন ওয়েস্টার্নে মিলেমিশে একাকার। ওয়েস্টার্ন কালচার নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন- তানিয়া তুষ্টি।
উপযুক্ত একটি পোশাক আপনাকে যেমন আরামদায়ক অনুভূতি দেবে, তেমনি ফ্যাশনেও দেবে ট্রেন্ডি লুক। অনেকের কাছে ফ্যাশনেবল ওয়েস্টার্ন আউটফিটে সময়টা হয় উপভোগ্য। ফ্যাশনের আধুনিকতার জন্যই বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন পোশাক এখন জায়গা করে নিয়েছে সবখানে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া জেন ওয়াই থেকে শুরু করে এক্সিকিউটিভ পর্যায়ের নারীরাও আজকাল ওয়েস্টার্ন পোশাক মজেছেন দারুণভাবে।
হেমন্তের এই মৃদুমন্দে সালোয়ার-কামিজের চেয়ে অনেকের কাছে ওয়েস্টার্ন পোশাকই পছন্দের। তাদের কাছে ওয়েস্টার্ন পোশাকে যেমন স্বস্তি, তেমনি ফ্যাশনটাও ঠিক থাকে। এই সময়ে বাইরে বের হওয়ার সময় ঝটপট তৈরি হতে যে কোনো তরুণীই লেগিন্সের সঙ্গে টপস বা কুর্তা পরে নিতে পারেন। এমন দিনে ওয়েস্টার্ন পোশাকে পার্টিতে যেতে চাইলে আপনার সঙ্গী হতে পারে টপস, শার্ট, টি-শার্ট কিংবা গাউন। মেয়েদের পছন্দ আর স্বস্তিকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমানে ফ্যাশন হাউসগুলো ওয়েস্টার্ন পোশাকে এনেছে নানা বৈচিত্র্যতা। ওয়েস্টার্ন পোশাকে আপনার ফ্যাশন কেমন হবে তা নির্ভর করে ড্রেসকোডের ওপর।
অফিস বা পার্টিতে তো বটেই, অনেকে সারা দিনের দৌড়ঝাঁপে এই পোশাকগুলোই বেছে নেন। হুটহাট করে যে কোনো স্থানে চলাফেরা করার জন্য বেশ স্মার্ট অপশন এই আউটফিট। সে কারণেই পার্টি কিংবা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি উৎসব-পার্বণে ঐতিহ্যবাহী দেশি পোশাকের সঙ্গে তরুণ-তরুণীরা বেছে নিচ্ছে ওয়েস্টার্ন আউটফিট। আজকাল লং শ্রাগের চাহিদা বেড়ে চলেছে উল্লেখ করার মতো। জিন্স আর টি-শার্টের ওপর এটি চাপিয়ে অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন যে কোনো জায়গা থেকে। আপনার লুকটায় যেন বদলে যাবে নিমিষে। এই ফ্যাশনের প্রতি মেয়েদের ঝোঁকটাও এখন বেশি। শ্রাগের আবার দৈর্ঘ্য প্রস্থের তারতম্য ঘটাতে পারেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী। এক বছর আগেও এগুলো শুধু লিলেন অথবা সিনথেটিক কাপড়ে কোমরের নিচ পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে দেখা যেত। ইদানীং অবশ্য চিকেন কাজের কাপড়ে লং শ্রাগ পরছে মেয়েরা। এটি যে কোনো পোশাকের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যাচ্ছে। টি-শার্ট জিন্সের পাশাপাশি কেউ কেউ প্লেনকাটের কামিজের ওপরও এই পোশাকটি জড়িয়ে নিচ্ছেন। তবে এই ধাক্কায় শর্ট শ্রাগ বাদ হয়ে যায়নি এখনো।
মেয়েরা পরছেন স্টোন ফিটিং জর্জেট কালার শার্টের সঙ্গে মিলিয়ে প্রিন্টেড কডের প্যান্ট ও ব্লুু কালারের কডের প্যান্টের সঙ্গে মানানসই প্রিন্ট শার্ট। আর এসবের সঙ্গে মানিয়ে স্টাইলিশ জুতা বা হিল। ফ্যাশন করতে পছন্দ করে এমন টিনরা ফিটিং টিউনিক টপস, শার্ট, স্টাইলিশ কুর্তা বেছে নিতে পারে অনায়াসেই। সফট কালার এ সময় বেশি আরামদায়ক। আপনার পছন্দের ওয়েস্টার্ন পোশাক কিনতে যেতে পারেন এক্সট্যাসি, ক্যাটস আই, আলফোসি, ট্রেনজ, ইয়েলো, জেন্টাল পার্ক, ইয়াং কে, ইনফিনিটিসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে।
ওয়েস্টার্ন পোশাক মানেই লুকের ভিন্নতা। একই সঙ্গে ভিন্নতা থাকে ফ্যাশন আর সাজগোজে। সবকিছু ঠিক রাখতে সাজের আগে ওয়েস্টার্ন ড্রেস সম্পর্কে জানা দরকার। ওয়েস্টার্ন পোশাক দুই ধরনের হয়। ক্যাজুয়াল আর ফরমাল। এ দুই ধরনের পোশাকের সাজ অবশ্যই ভিন্ন হবে। ফরমাল প্যান্ট-শার্ট পরলে সাজগোজ হবে একদমই সীমিত। হালকা মেকআপের সঙ্গে হালকা জুয়েলারি। দিনের বেলায় চুল পনিটেইল করে রাবার দিয়ে বাঁধলে ভালো লাগবে। এ ধরনের পোশাকে পাতলা গোল্ডের চেইন সঙ্গে ছোট্ট একটি লকেট অনেক ভালো লাগবে। এক পাথরের ছোট্ট কানের টপ মানিয়ে যায়। তবে এ ধরনের পোশাকে অনেকেই কানে কিছু পরতে নারাজ। তবে হাতে কিছু একটি না থাকলে একদমই বেমানান মনে হয়। জুতা না স্যান্ডেল পরবেন তা নির্ভর করবে ড্রেসের ধরনের ওপর।
অন্যদিকে ক্যাজুয়াল প্যান্টের সঙ্গে ফতুয়া বা টপস পরলে কানে লম্বা দুল ও হাতে মোটা ব্রেসলেট পরতে পারেন। অনেকে ক্যাজুয়াল শার্ট পরতে পছন্দ করেন। এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে বড় মালা ভালো লাগবে। এ ধরনের পোশাকে ছোট গয়না খুব বেশি ভালো লাগবে না। সবচেয়ে মানানসই হয় অ্যান্টিক বা মেটাল গয়না। টি-শার্টের গলার ধরনের ওপর নির্ভর করবে আপনি কী ধরনের গয়না পরবেন। হাই নেক টি-শার্টে গলা আড়ালে থাকে বলে গয়না পরার দরকার হয় না। লো নেক টি-শার্টে গলায় ছোট্ট লকেট পরতে পারেন। কিন্তু টি-শার্টে অনেক কাজ করা থাকলে গলায় কিছু না পরাই ভালো। আজকাল প্লাজো স্টাইলের প্যান্টও চলছে দারুণভাবে। টপস, শার্ট বা টি-শার্ট যাই পরুন না কেন তার সঙ্গে এ ধরনের প্যান্ট মানিয়ে যাবে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা পরাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের পোশাকে ওয়েস্টার্ন লুকের জুতা উপযুক্ত হবে। ড্রেসের ধরনের পাশাপাশি মেকআপ হতে হবে দিন এবং রাতের ওপর নির্ভর করে। দিনের বেলায় ক্যাজুয়াল ড্রেসের মেকআপ খুব হালকা হওয়া চাই। হালকা সাজের মধ্যে নো মেকআপ লুক থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। কাজল ব্যবহার হতে পারে আপনার সঙ্গে মানিয়ে। ঠোঁটে হালকা গোলাপি বা বাদামি গ্লস লাগাতে পারেন। ম্যাট লিপস্টিকও খারাপ হবে না। ওয়েস্টার্ন পোশাকে আর একটি ব্যাপারে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। আর তা হলো আপনার হাত-পায়ের নখের সৌন্দর্য। নখের নিয়মিত পরিচর্যা যেমন করা উচিত তেমনিভাবে তা সাজিয়ে রাখাটাও জরুরি।
পরিশেষে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরার আগে মনে রাখতে হবে এটা আমাদের রুচি, সংস্কৃতি ও সমাজে গ্রহণযোগ্য কিনা এবং মানাচ্ছে কিনা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, লং স্কার্ট ১২০০-৫০০০ টাকা। কেইপ, টপস ও টিউনিক ৬০০-৫০০০ টাকা। গাউন ২০০০-১০,০০০ টাকা, টি-শার্ট ৩০০-১২০০ টাকা। ওয়েস্টার্ন পোশাকের তালিকায় সেইলর, ইনফিনিটি, গ্রামীণ ইউনিক্লো, মার্জিন, রঙ বাংলাদেশের ওয়েস্ট রঙ, ইয়াং কে, ইয়োলো, লা-রিভসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এখন জনপ্রিয়।