এসে গেল ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন। বিশ্বে এই প্রথম। আর এমনটা দাবি করেছেন আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে’র (নিএইড) ভাইরোলজিস্ট স্টিফেন হোয়াইটহেড ও তার সহযোগী গবেষকেরা। তাদের পরীক্ষা-নির্ভর গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘দ্য লাইভ অ্যাটেন্যুয়েটেড ডেঙ্গি ভ্যাকসিন টিভি-০০৩ এলিসিট্স কমপ্লিট প্রোটেকশান এগেনস্ট ডেঙ্গি ইন আ হিউম্যান চ্যালেঞ্জ মডেল’। গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় যা রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে।
ডেঙ্গুর আতঙ্কে তটস্থ থাকতে হচ্ছে গোটা বিশ্বকে। সম্প্রতি ডেঙ্গু মহামারী হয়ে উঠেছে পুয়ের্তো রিকোয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, প্রতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে বিশ্বে আক্রান্ত হচ্ছেন গড়ে ৩৯ কোটি মানুষ!
সদ্য প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি কেন হঠাৎ এত আলোড়ন ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে? এর কারণ পরীক্ষামূলকভাবে ওই ভ্যাকসিনটি মানুষের ওপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে, ওই টিকা যারা নিয়েছেন ডেঙ্গুর ভাইরাস তাদের আদৌ কাবু করতে পারেনি। আমেরিকার দু’টি জায়গায় চালানো হয়েছে ওই পরীক্ষা। বার্লিংটনের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভারমন্ট কলেজ অফ মেডিসিন’ আর বাল্টিমোরের ‘জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথে’। পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে মোট ৪১ জনের ওপরে। তাদের মধ্যে ২১ জনকে দেওয়া হয়েছিল সদ্য আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটি। বাকি ২০ জনকে দেওয়া হয়েছিল শুধুই প্লেসবো ইঞ্জেকশান। তার ৬ মাস পরে তাদের শরীরে কৃত্রিম ভাবে ঢোকানো হয় ডেঙ্গুর ভাইরাস। তাতে দেখা গেছে, যে ২১ জনকে ডেঙ্গুর টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের কিছুই করতে পারেনি ডেঙ্গুর ভাইরাস। আর যে ২০ জনকে দেওয়া হয়েছিল প্লেসবো ইঞ্জেকশান, ডেঙ্গুর সেই ভয়ংকর জ্বর তাদের না হলেও, তাদের গায়ে লাল রঙের চাকা চাকা ‘র্যাশ’ বেরিয়েছে। যার মানে, অল্প হলেও ডেঙ্গুর ভাইরাস তাদের শরীরের ক্ষতি করেছে।
সহযোগী গবেষক বাল্টিমোরের ‘জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথে’র ভাইরোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মাধুরী সিংহের ব্যাখ্যায়, ‘‘ডেঙ্গুর মোট চার ধরনের ভাইরাস রয়েছে। ‘ডেন-১’, ‘ডেন-২’, ‘ডেন-৩’ আর ‘ডেন-৪’। এগুলোকে বলা হয় ‘সেরোটাইপ’। জিকা ভাইরাস যাদের মাধ্যমে ছড়ায়, সেই ‘এডিস মসক্যুইটোজ’ প্রজাতির মশারাই এই ভাইরাসের বাহক।প্রতিপালক। আমাদের কাজটা হয়েছে ‘ডেন-২’ ভাইরাসকে নিয়ে। ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্য ‘সেরোটাইপ’গুলোর তুলনায় ‘ডেন-২’ একটু দুর্বল। তার ‘ছোবলে’ একটু কমই থাকে ‘বিষ’। এই ভাইরাসগুলোকে মূলত পাওয়া যায় আফ্রিকার দেশ-কিংডম অফ টোঙ্গায়। আমরা ওই ‘ডেন-২’ ভাইরাসেরই একটা অবিকল ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড ভার্সন’ বানিয়েছিলাম। যাকে বলা হয় ‘জিএমভি’। ‘ডেন-২’-এর ‘জিএমভি’ দিয়েই বানানো হয়েছে ওই টিকা। যার নাম-‘TV003’। অনেকটাই নিরাপদে পরীক্ষা চালানো যায় বলে টিকা বানানোর জন্য আমরা ‘ডেন-২’-এর ‘জিএমভি’-কে বেছে নিয়েছিলাম। যাতে রক্তে ওই ভাইরাস মিশে গেলেও (যাকে বলা হয়, ‘ভাইরেমিয়া’), যিনি সেটা নিচ্ছেন, তাঁকে খুব সংকটজনক অবস্থায় না পড়তে হয়। তাতে দেখা গেছে, যারা ওই টিকা নিয়েছিলেন, ডেঙ্গির ভাইরাস তাদের শরীরে কোনো ‘ছোবল’ বসাতে পারেনি। আর যাদের প্লেসবো ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়েছিল, তারাও ভয়ংকর জ্বরে কাবু হননি, ডেঙ্গুর ভাইরাসের হানাদারিতে যেটা হয়। তাদের গায়ে শুধুই লাল রঙের চাকা চাকা ‘র্যাশ’ বেরিয়েছিল, ডেঙ্গুর ভাইরাসের হানায় যা হয়। অবিকল সেই একই রকমের ‘র্যাশ’। যে ২০ জনকে শুধুই প্লেসবো ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ১৬ জনের (৮০ শতাংশ) শরীরে ওই ‘র্যাশ’ বেরিয়েছিল। বাকি চারজনের (২০ শতাংশ) শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার (ডব্লিউবিসি) সংখ্যা বেশ কিছুটা কমে গিয়েছিল, সাময়িকভাবে।’’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা