সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ও প্রতিকার

অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ও প্রতিকার

একজন সুস্থ ও সচল মানুষের হৃদযন্ত্র তাকে সচল রাখার জন্য গর্ভধারণের ২২ দিন হতে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত ক্লান্তিহীন ও পরিশ্রান্তহীনভাবে প্রতি মিনিটে ৬০-৯০ বার heart beat (হৃদস্পন্দন) করে। যা সাধারণত  খুব একটা দুশ্চিন্তায় বা দৈনন্দিন কাজ কর্ম ও নিদ্রায় কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না। হার্টবিট যা হাত (Radial artery) বা গলার দুপাশের (carotid artery) তে অনুভূত ও নিরুপিত করা যেতে পারে। হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক গতি ও এর অন্তর্নিহিত কারণ নিরূপণের মাধ্যমেই দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব।

উল্লেখ্য, শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এর কম বা বেশি হতে পারে, যাকে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা sinus Arrhythmia বলা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, শিশুর বয়স ১-৪ বছর পর্যন্ত হার্টের গতি ১১৫-১২০/মিনিটে হতে পারে যা স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। বড়দের বিশেষ করে Athletes দের হার্টবিট ৩৫-৪০ / মিনিটে হতে পারে, বিশেষ করে টেনিস প্লেয়ার বা ম্যারাথনিষ্ট উল্লেখ্য।

Arrhythmiai কারণে হৃদযন্ত্র তার ছন্দ হারিয়ে কখনো খুব ধীরে বা কখনো অতি দ্রুত গতিতে পাম্প করে। ফলে রক্ত স্বাভাবিক ভাবেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পৌঁছাতে পারে না । এর ফলে নানান জটিলতা তৈরি হয়। গতি কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়ার কারণে রোগী ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন। কমে যাবার কারণ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, inferior Myocardial Infarction যাতে সাধারণত ডান দিকের করোনারি (RCA), বা (LCX) আক্রান্ত হয়ে হৃদস্পন্দনের গতি কমে আসতে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩৫-৪০/ মিনিটে নেমে আসে সঙ্গে রক্তচাপ বা ইচ ও নেয়ে যাওয়ার ফলে রোগীর মাথা ঘুড়ানো তথা পড়ে যেতে পারেন যা দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য। কিছু ওষুধ যেমন বিটা ব্লকার বিশেষ করে atenolol এ সঙ্গে diltiazem বা carvedilol, থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন বিশেষ করে TSH বেড়ে যাওয়ার কারণে (hypothyroid)! হার্ট রেট কমে। রক্তে ইলেক্ট্রোলাইটস বিশেষ করে পটাসিয়াম বেড়ে যাওয়ার কারণে হার্ট রেট কমে যায়।

অন্যদিকে রক্ত শূন্যতা, hyperthyroidism, শরীরের অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ, হার্ট ফেইলিওর বা হার্টের মাংসপেশীর অসুখ (myicarditis specially viral including dengue), pregnancy-এর সময় হার্ট বড় ও দুর্বল হয়ে হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও হার্টের conducting system বা তরঙ্গ প্রবাহে নিয়োজিত নার্ভ বা পরিবাহকের হৃদযন্ত্রের ওপরের বা নিচের প্রকোষ্টের অস্বাভাবিক কর্ম বা trigger হার্টের গতি বাড়াতে বা কমাতে পারে। জন্মগত তথা হার্টের অ্যাটাকের কারণে হার্ট রেট বেড়ে বা কমে যেতে পারে। আমাদের কাছে যে সময় রোগীরা এসব উপসর্গ নিয়ে আসেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ECG normal হয়ে থাকে। মাথা ঘুড়ানো, (vertigo), ঝিমঝিম করা (dizziness), সাময়িক জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়া (syncope) উল্লেখযোগ্য।

রোগের কারণ নির্ঘট ধারণে ECG, Bilateral Common Carotid Doppler Ultrasound studz, 24 hour Holter ECG monitoring, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা, শর্করা ও ইলেকট্রেলাইটস মাপা খুবই জরুরি।

হার্টের অ্যাটাকের কারণে রেট কম অবস্থায় থাকলে প্রথমে temporary Pacing, ক্ষতিকর ওষুধ beta বা calcium channel blocker বন্ধ করা, পরিশেষে প্রয়োজনে permanent pacemaker plantation জরুরি হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে conducting system এর mapping যা electrophysiology studz দ্বারা নির্ধারণ ও radiofrequency ablation (EP),  এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে থাকে। তাছাড়াও, endstage refractory heart failure এর ক্ষেত্রে AICD I CRTD implantation, কিছুটা উপশম দিতে পারে!

অধ্যাপক ডা. এএইচএম ওয়ালিউল ইসলাম

ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট,

এ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর