শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস কাল

অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য

অধ্যাপক ব্রিগে. জেনা. (অব.) ডা. মো. আজিজুল ইসলাম

অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য

আগামীকাল ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সারা বিশ্বে সচেতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য’ (Mental Health in an Unequal World) । পৃথিবীতে অসমতার চিত্রটি সুস্পষ্ট। এ অসমতা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রে। মানসিক স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য এবং মৌলিক অংশ। স্বাস্থ্যের তিনটি মৌলিক উপাদান শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই আমরা স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক সুস্থতাকেই গুরুত্ব দেই। মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভুলে যাই বা মানসিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধে আমরা থাকি অসচেতন এবং অজ্ঞ। অথচ মানসিক সুস্থতা ছাড়া কোনো সুস্থতা সম্ভব নয় ‘No Health Without Mental Health’। মন চালিকা শক্তি। আমাদের চলন-বলন-কথন, ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা, কর্মস্পৃহা-কর্মোদ্যম, আবেগ-অনুভূতি সব কিছুর মূলেই রয়েছে মন। মন যদি হয় অসুস্থ তবে অন্যান্য সব কিছুর সঙ্গে কর্মোদ্যম, কর্মস্পৃহা, চিন্তা-চেতনা, বিচার-বিশ্লেষণ স্তব্ধ হয়ে যায়, রহিত হয়ে যায় বা মুখ থুবড়ে পড়ে। সুতরাং মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব দিতে হবে যথাযথভাবে। অন্য সব অসমতার মতো অসমতা রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধে জানার, বোঝার। অসমতা রয়েছে সামাজিক বিভিন্ন অনুষঙ্গে। সুতরাং মানসিক রোগের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ভুলে গিয়ে আমরা ভাবি মানসিক রোগ কোনো জীনে-ভূতে ধরা, অলগা লাগা, পরীর আসর, খারাপ বাতাস লাগার বিষয়। অসমতার এই বৃত্ত ভাঙার জন্য প্রয়োজন জনসচেতনা। প্রয়োজন কুসংস্কার ও অপচিকিৎসা থেকে মানসিক রোগীকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাছে পৌঁছানো। করুণ চিত্রটি হলো মানসিক রোগে আক্রান্ত প্রায় ৯২ ভাগ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন না। তাই হয়তো ডিজিটাল বাংলাদেশের সুরম্য অট্টালিকা আর চোখ ধাঁধানো জৌলুস পূর্ণ নগর জীবনেও রাস্তার পাশে অর্ধনগ্ন, নগ্ন অবস্থায় জটিল ও ক্রনিক মানসিক রোগীটি ডাস্টবিনে খাবার খোঁজে। অসমতার এই চিত্রটিকেও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। কভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে মানসিক স্বাস্থের চিত্রটি আরও করুণ। কভিড পরবর্তী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ সময়ে একাকীত্বে ভোগেন শতকরা ৭১ জন, বিষণ্নতায় ভোগেন ৩৮%, উদ্বিগ্নতায় ভোগেন ৬৪%, নিদ্রাহীনতায় ভোগেন ৭৩%। অর্থাৎ কভিড পরবর্তী বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা আরও সুস্পষ্ট। সুতরাং অসম বিশ্বে অসম সমাজের সবাইকে সচেতন হয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে একটি সুস্থ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে। তাই অবহেলা না করে এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে অবশ্যই  যথেষ্ট সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।

লেখক : মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

সর্বশেষ খবর