প্রত্যেক মানুষই জীবনে কখনো না কখনো প্যালপিটিশন বা বুক ধড়ফড়ে পতিত হয়েছেন। সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তিরা অত্যধিক পরিশ্রমকালীন ও পরিশ্রমের শেষে স্বল্প সময়ের জন্য বুক ধড়ফড় অনুভব করে থাকে এবং আমরা জানি যে, কখনো ভয় পেলে ও অত্যধিক উত্তেজিত হলে মানুষ একই ধরনের বুক ধড়ফড়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় অনেক অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষ প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এত গেল সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হওয়া পরিস্থিতি। এসব অবস্থা ছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হন, তবে এ অবস্থাকে হৃদরোগের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, যদি কোনো ব্যক্তি তার নিজের হার্টবিট অনুভব করতে থাকে বা হার্টবিট বুঝতে থাকে তাকেই প্যালপিটিশন বলা হয়। মানুষের হার্ট প্রতিনিয়ত বিট করে থাকে, কিন্তু মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় কখনোই তা টের পায় না, কিন্তু প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিরা হার্টবিট অনুভব করে থাকেন বা বুঝতে পারেন। বহুবিধ কারণে মানুষ প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন- রক্তচাপ অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে প্যালপিটিশন হয়ে থাকে, রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে, বেশ কিছু মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্যালপিটিশন হয়ে থাকে। প্যালপিটিশনের অন্যতম কারণ হৃদরোগ। হৃৎপিণ্ডের বা হার্টের অনেক অসুস্থতায় মানুষ প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন- জন্মগত হৃদরোগ, রিউমেটিক ফিভার, হার্ট ভাল্বের সমস্যা, মাইওকার্ডাইটিস, কার্ডিওমাইওপ্যাথি, হার্টব্লক, হার্টস্ট্রোক বা হার্টঅ্যটাক, হার্ট ফেইলুর ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে হার্টের প্রধান অসুস্থতা অর্থাৎ হার্টব্লকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হওয়ার হার অত্যধিক বেশি হওয়ায়, প্যালপিটিশনে আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স যদি ৪০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে হয় তবে ধরে নেওয়া হয়, তার কোনো না কোনো পর্যায়ে হার্টব্লক থাকতে পারে। হার্টব্লকে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রাথমিক পর্যায়ে পরিশ্রমকালীন প্যালপিটিশন অনুভব করে থাকে, বিশেষ করে ব্যক্তি যখন একটু দ্রুত হাঁটতে থাকে বা সাঁতার কাটতে থাকে বা কোনো কারণে অত্যধিক টেনশনে পতিত হয় এবং যখন তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ সম্পাদন করতে যান, যেমন-বাস বা ট্রেন ধরার জন্য তাড়াহুড়ার সময়ে, ঝড় বৃষ্টি আসার মুহূর্তে, কেউ যখন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যায় বা পাহাড় বেয়ে ওপরে উঠতে যায় তখনই প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ সময় প্যালপিটিশনের সঙ্গে বুক ব্যথা, অত্যধিক ক্লান্তির মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, এ ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যক্তি যদি কাজ বন্ধ করে দেয় বা টেনশন থেকে মুক্তি পান বা বিশ্রাম গ্রহণ করে, তবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্যালপিটিশন ও অন্যান্য উপসর্গ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যায়। তবে হার্টব্লক বৃদ্ধি পেলে ব্যক্তি অল্প পরিশ্রমেই প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং বিশ্রামে তা থেকে পরিত্রাণ পেতেও অধিক সময় লেগে যায়। হার্ট ব্লক গুরুতর অবস্থায় পৌঁছলে অবিরামভাবে প্যালপিটিশন অনুভব করতে থাকে, যা সময়ে সময়ে একটু কম বেশি হলেও পরিপূর্ণভাবে পরিত্রাণ ঘটে না। সুতরাং, বয়স্ক ব্যক্তিরা প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হলে ধরে নিতে হবে যে, ওই ব্যক্তি কোনো না কোনো পর্যায়ে হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন।
-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।