চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল্ট প্রাইজ এখন প্রজন্মের অনুপ্রেরণার গল্প। ২০১৮-১৯ সালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় হাল্ট প্রাইজ প্রতিযোগিতা। তখন সীমিত পরিসরে এটি শুধু ক্যাম্পাসেই আয়োজন হতো। বিজয়ী দলের স্বপ্ন ছিল শুধু জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়া। এখন সেই স্বপ্নের পরিধি যেমন বড় হয়েছে, তেমন বেড়েছে প্রতিযোগিতার ব্যাপ্তি ও গুরুত্ব। হাল্ট প্রাইজ শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয় বরং এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তরুণরা খুঁজে পান ভবিষ্যতের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সুযোগ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসায় উদ্যোগ প্রতিযোগিতা হিসেবে পরিচিত হাল্ট প্রাইজ আয়োজন করে জাতিসংঘ ও বিল কিনটন ফাউন্ডেশন। আর যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্ট একে আখ্যা দিয়েছে ‘শিক্ষার্থীদের নোবেল পুরস্কার’। এ বছর সেই ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে নতুন অধ্যায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল্ট প্রাইজ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অর্জন করেছে মর্যাদাপূর্ণ ‘প্রোগ্রাম অব দ্য ইয়ারথ’ খেতাব। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও বাংলাদেশের দুই হাজারেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে এই কৃতিত্ব এনেছে চবি শিক্ষার্থীরা। এ অর্জন শুধু একটি শিরোপা নয়; এটি এক ধরনের স্বীকৃতি যে, সীমিত সম্পদ আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়েই বিশ্বজয় করা সম্ভব।
সাফল্যের পেছনের গল্প : এমন একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে শীর্ষস্থানে আসা সত্যি বড় অর্জন। দেশের তরুণ সমাজের উদ্যোক্তা শক্তির আরেক উদাহরণ এটি। বিজয়ীরা জানালেন তাদের অভিজ্ঞতার গল্প। চবির ক্যাম্পাস ডাইরেক্টর আমিনুল ইসলাম শরীফের ভাষায়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হাল্ট প্রাইজ টিমের সফলতার পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে শক্তিশালী নেতৃত্ব ও সুসংগঠিত আয়োজক দল। পুরো আয়োজনকে সুচারুভাবে পরিচালনা করা, সামাজিক উদ্যোগের প্রকৃত প্রভাবকে সামনে আনা এবং সমাজের সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে সৃজনশীল ব্যবসায়িক ধারণা তৈরি তাদের আলাদা করেছে। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও দলগতভাবে একযোগে কাজ করার দক্ষতাও এই অর্জনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।’ বছরজুড়ে একাধিক নতুন ও অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ এবারের প্রোগ্রামকে আরও স্বতন্ত্র ও সফল করে তুলেছে। ‘প্রোগ্রাম অব দ্য ইয়ারথ’ খেতাব নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। তবে এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ছয় বছরের অধ্যবসায়ের গল্প-নিজেদের অতিক্রম করার উপাখ্যান। বিশেষত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের অন-ক্যাম্পাস রাউন্ডে নেওয়া কিছু ব্যতিক্রমী ও ইনোভেটিভ উদ্যোগ চবিতে আয়োজিত এই প্রোগ্রামকে আন্তর্জাতিক পরিসরে ভালো করার ভিত গড়ে দেয়। বছরজুড়ে নেওয়া এসব ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মধ্যেই রয়েছে তাদের আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের রহস্য।
Global Entrepreneurship Week : প্রথমবারের মতো চবি হাল্ট প্রাইজ আয়োজন করে ‘Entrepreneurs POV’ নামের একটি বড় ইভেন্ট। এতে অংশ নেন ১৬ জন স্থানীয় উদ্যোক্তা। তাদের অভিজ্ঞতার গল্প শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয়।
Creative Branding & Storytelling : অন-ক্যাম্পাস রাউন্ডজুড়ে কনটেন্ট, ভিজ্যুয়াল এবং গল্পভিত্তিক ব্র্যান্ডিং ছিল ব্যতিক্রমী। প্রতিটি ক্যাম্পেইন শিক্ষার্থীদের মনে সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল, যা আয়োজনে দেয় নতুন মাত্রা।
Fight Against Winter : শুধু প্রতিযোগিতা নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতাকেও প্রাধান্য দিয়েছে চবি হাল্ট প্রাইজ। শীতবস্ত্র বিতরণ থেকে শুরু করে নানা ইমপ্যাক্ট ক্যাম্পেইন তাদের কার্যক্রমকে রূপ দিয়েছে এক সামাজিক আন্দোলনে।
Plastic Upcycling Campaign with Shuchona : প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় স্থানীয় সংগঠন শুচনার সঙ্গে যৌথভাবে ক্যাম্পেইন চালায় তারা। সচেতনতা তৈরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, দুটোই সমানতালে এগিয়েছে এই উদ্যোগে।
চূড়ান্ত টিমদের মেন্টরিং : যে ছয়টি টিম ফাইনালে উঠেছিল, তাদের জন্য ছিল অভিজ্ঞ মেন্টরদের নিবিড় প্রশিক্ষণ। ফলে প্রতিটি দলই নিজেদের সেরা সংস্করণ নিয়ে হাজির হয়েছিল চূড়ান্ত পর্বে।
সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক : এখন পর্যন্ত মোট সাতবার অন-ক্যাম্পাস রাউন্ড আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হাল্ট প্রাইজ। তবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এই আয়োজন ছিল নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সফল। আর সেই সাফল্যই এনে দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা প্রোগ্রামের স্বীকৃতি। সঙ্গে লন্ডনের গ্লোবাল ফাইনালে অংশগ্রহণের সুযোগ। এর আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের একটি দল তাদের ‘SafeWheel’ উদ্যোগ নিয়ে গ্লোবাল ফাইনালে পৌঁছেছিল। তবে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসে। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তরুণদের দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।