বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

দুই ঘণ্টায় ১৭০ কোটি টাকা বিক্রির রেকর্ড

এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস (রুশো), চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেড

দুই ঘণ্টায় ১৭০ কোটি টাকা বিক্রির রেকর্ড

দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজ। অসংখ্য বিক্রেতাকে লক্ষাধিক ক্রেতার সঙ্গে যুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শতাধিক ক্যাটাগরির প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখের অধিক পণ্য কেনাকাটায় দারাজ এখন ক্রেতাদের আস্থার নাম। ক্রেতাদের তাৎক্ষণিক এবং সহজ সুবিধাদানের পাশাপাশি প্রতি মাসে ২০ লাখেরও বেশি পণ্য বিশ্বের সব প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে এই অনলাইন মার্কেটপ্লেস।  এ বিষয়ে কথা বলেন দারাজ বাংলাদেশের চিফ  করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার  এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সাইফ ইমন

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দারাজ-এর বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে বলুন?

এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস : ই-কমার্স বাংলাদেশে নতুন ইন্ডাস্ট্রি। অনলাইন বিজনেস আরও আগে শুরু হলেও দারাজ বলছে মার্কেট প্লেস। কোনো প্রোডাক্ট কিনে বিক্রয় করছি না আমরা। ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তৈরি করছি। দারাজের ভার্চুয়াল শপে সারা দেশ থেকে বিক্রেতারা যেমন পণ্য উপস্থাপন করছেন তেমনি গোটা দেশ থেকেই অর্ডার আসছে। এই কনসেপ্টটা একেবারেই নতুন। ২০১৫ সালে আমরা শুরু করি। ২০১৮ সালে আলিবাবা আমাদের অধিগ্রহণ করে। এখন আমরা বলতেই পারি সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে দারাজ বাংলাদেশ।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাদের ব্যবহারকারী কতজন? দিনপ্রতি পণ্যের চাহিদা কেমন?

এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস : আমাদের ব্যবহারকারী ৬০ শতাংশ। দারাজে প্রতিদিন এক মিলিয়ন ইউজার ভিজিট করে থাকে। প্রতিদিন আমাদের ৮৫ হাজারেরও বেশি অর্ডার আসে। এটা আমাদের দেশে ই-কমার্স সেক্টরের জন্য ইতিবাচক। মানুষের আস্থা এই সেক্টরে বাড়ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : গ্রাহকদের এ আস্থা তৈরিতে আপনাদের ভূমিকা?

এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস : এ বিষয়টি নিয়ে অনেক ধরনের কথাই শোনা যায়। খেয়াল করলে দেখবেন এখানে দুটি বিষয় রয়েছে। সবাই জানেন এই সেক্টরে খারাপ দিন গেছে কিছুদিন আগেই। ভোক্তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তখন আস্থার ঘাটতি হবে স্বাভাবিক। যদিও এর প্রভাব দারাজের ওপর পড়েনি। কারণ আমরা প্রথম থেকেই ঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। বর্তমানে ই-কমার্স সেক্টরের জন্য এসওপি হয়েছে। যেখানে পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রোডাক্ট ডেলিভারি করতে হবে। কিন্তু এর আগে থেকেই আমরা এভাবেই প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিয়েছি। ফলে মানুষের আস্থা অর্জনও করতে পেরেছি আমরা। আরেকটা দিক হচ্ছে, হয়তো আপনি কোনো প্রোডাক্ট অর্ডার করলেন কিন্তু পেলেন না অথবা আশানুরূপ প্রোডাক্ট পেলেন না। হয়তো নীল গেঞ্জি অর্ডার করেছিলেন এখন পাওয়ার পর দেখলেন লাল গেঞ্জি। এই ব্যবসা বাংলাদেশে নতুন। আগে দোকানে প্রোডাক্ট নিয়ে যেতে হতো। সেখান থেকে ক্রেতারা পছন্দ মতো প্রোডাক্ট ক্রয় করতেন। এখন কিন্তু টেকনোলজির প্রসারে মানষের ঘরের দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছে পণ্য। এ ক্ষেত্রে আপনি নীল গেঞ্জি অর্ডার করলে নীল গেঞ্জিই যেন পেতে পারেন এই জন্য আমরা ট্রেনিং দিয়ে থাকি।   সঠিক প্রক্রিয়ায় যাতে ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো পণ্য পেতে পারেন। এটা কিন্তু সহজ ছিল না মোটেই। যে কোনো প্রকার নতুন কিছু আত্মস্থ করতে সময় লাগে। আবার ভোক্তাদের ক্ষেত্রেও বিষয় রয়েছে। যেমন আমার কাছে একবার অভিযোগ এলো পণ্যের ছবি দেখে আকৃতি বড় মনে হয়েছে। আদতে তা ছিল না। পণ্যের বর্ণনায় অবশ্যই আকৃতির মাপ দেওয়া আছে। তিনি তা না দেখেই অর্ডার করেছিলেন। এমন ঘটনা আরও আছে। তাই কোনো পণ্য ক্রয় করার আগে দেখে নিতে হবে পণ্যের রিভিউ ও প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন। আমরা এই জায়গাতেও কাজ করছি যেখানে একজন ক্রেতা যেন সঠিকভাবে পণ্য ক্রয় করতে পারেন। দারাজের রয়েছে ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি। 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নেতিবাচক কোনো কিছু ঘটলে কেমন ব্যবস্থা নেন?

এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস : সাত দিনের মধ্যে কেউ পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে দারাজ ক্রেতাকে টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। আমরা ক্রেতাদের হয়ে রিস্ক নেই। কেউ চিটিং করলে নিশ্চিত করি ক্রেতা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আবার এমনো হয়েছে, পণ্য ক্রয় করার সাত দিনের মাথায় ফেরত দিয়ে দেয়। আমাদের এটাও দেখতে হয় যে, ক্রেতাদের অভিযোগের সত্যতা কতটুকু।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ই-কমার্সে লোভনীয় অফার সম্পর্কে বলুন?

এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস : দারাজ সব সময় ভালো অফার দিয়ে থাকে। যদি কখনো ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেখেন সেখানে দারাজ সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ শতাংশ দিয়ে থাকে, বাকিটা নয়। আপনার যত বেশি পণ্য বিক্রি হবে তখন পণ্যের উৎপাদন খরচও কমে যাবে। দারাজ ১১.১১ ক্যাম্পেইনে রাত ১২টা থেকে ২টা অর্থাৎ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়েছে ১৭০ কোটি টাকা। এই দারাজ ১১.১১ ক্যাম্পেইনের মতো মেলাগুলোয় বিক্রি বেড়ে যায় অনেক। এটা আমাদের ই-কমার্স সেক্টরের জন্য খুবই ইতিবাচক।  যখন এমন বিক্রি বেড়ে যায় তখন ডিসকাউন্ট দেওয়াও সহজ হয়ে যায়। তখন বিক্রেতা ও দারাজ যৌথভাবে ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : মানসম্পন্ন পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে কী ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন?

এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস :  এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক পয়েন্টের ব্যবস্থা আছে বিক্রেতাদের জন্য। কোনো পণ্য ফেরত আসলে পয়েন্ট কমে যায়। কোনো বিক্রেতার ক্ষেত্রে পাঁচবার এমন হলে তার দোকান বন্ধ থাকে এক সপ্তাহের জন্য। এ রকম আরও কিছু ব্যবস্থা রয়েছে যেন ক্রেতারা সঠিক পণ্য ক্রয় করতে পারেন। আর বিক্রেতাদের খারাপ পণ্য দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ দারাজের থেকে সে পাওনা বুঝে পাবে সাত দিন পর। এ সময়ের মধ্যে গ্রাহকের পণ্য নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে দারাজ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।  

সর্বশেষ খবর