বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বে-টার্মিনাল ঘিরে স্বপ্ন দেখছে চট্টগ্রাম বন্দর

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বে-টার্মিনাল ঘিরে স্বপ্ন দেখছে চট্টগ্রাম বন্দর

উন্নত বিশ্বের আধুনিক বন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চট্টগ্রামের সাগর উপকূলে গড়ে উঠছে বে-টার্মিনাল। এই বে-টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে দেশের অর্থনীতির পাইপলাইন-খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে কমপক্ষে ছয় গুণ। আরও গতি পাবে আমদানি-রপ্তানিতে। কমবে ব্যয়। এমনকি পরবর্তী ১০০ বছর নতুন করে বন্দর সম্প্রসারণের কোনো চিন্তাই করতে হবে না কর্তৃপক্ষকে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বে-টার্মিনালের জন্য নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে মাস্টার প্ল্যানসহ একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। যে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাতে কোনো কিছু যুক্ত হবে কিনা সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ছয়গুণ বড় হবে বে-টার্মিনাল। এটি নির্মাণ হবে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বহু গুণ। বে-টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হলে আগামী ১০০ বছর বন্দর সম্প্রসারণ নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না।

জানা যায়, দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। তাই বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরে পতেঙ্গা ও হালিশহরের সমুদ্র উপকূলভাগের বিস্তীর্ণ ভূমিতে চলছে বে-টার্মিনাল তৈরির প্রক্রিয়া। এ প্রকল্পের পূর্ব পাশে রয়েছে আউটার রিং রোড এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ চরে হবে যার অবস্থানে। বে-টার্মিনালে প্রথম পর্যায়ে তিনটি টার্মিনাল হবে। যার মধ্যে দুটি কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। চাহিদার কথা মাথায় রেখে ট্রাক টার্মিনাল এবং ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। বে-টার্মিনাল চালু হলে যে কোনো দৈর্ঘ্য এবং প্রায় ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমান চ্যানেলে মাত্র ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ কর্ণফুলীতে ঢুকতে পারে। তাও জাহাজকে দুটি বাঁক অতিক্রম করতে হয়। যার জন্য দিনে মাত্র চার ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। বে-টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ পরিচালনা করা যাবে। বে-টার্মিনালে ৫০টি জাহাজ একসঙ্গে বার্থিং করা যাবে। বন্দরের জেটির দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটার, বে-টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ৬.৫ কিলোমিটার। বে-টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব ঘুচবে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিচালন ব্যয় অনেক কমবে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্ব বাড়বে বাংলাদেশের। দেশের আমদানি রপ্তানির বেশির ভাগই পণ্য হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ২০২১-২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। প্রতি বছর এ হার বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ট্রানজিট ও অন্যান্য কারণে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের মাত্রা আরও বাড়লে বন্দরকে চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হবে। এ অবস্থায় বে-টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার।

 

 

সর্বশেষ খবর