ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহে স্থাপিত ভারতের একটি সেনা চৌকিতে গত বুধবার ৩ ফেব্রুয়ারি একটি বিশাল আকৃতির তুষারধসের আঘাতে ১০ সেনা সদস্য নিখোঁজ হয়েছিলেন। শুধু নিখোঁজ বললে ভুল হবে কারণ ভারত সরকার ইতোমধ্যে তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত করেছিল। এর মধ্যে লাশগুলো উদ্ধারের জন্য দেশটির সেনাবাহিনী সেখান অভিযানও চালাচ্ছিল। অভিযান চালাতে গিয়েই গত সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনার ৫ দিন পর তারা সিয়াচেন হিমবাহের ৩৫ ফু্ট নিচ থেকে হনুমানথাপ্পা কোপাড় নামে এক সেনা ল্যান্স নায়েকের অচেতন জীবিত দেহ উদ্ধার করে। মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কয়েক টন বরফ ও তুষারের নিচ থেকে তার জীবিত উদ্ধারকে অলৌকিক ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। মি. কোপাড় এত কম তাপমাত্রায় কিভাবে এতদিন বেঁচে থাকলেন এবং ভারতীয় সেনারা কীভাবে তার সন্ধ্যান পেলেন ও উদ্ধার করে নিয়ে আসলেন তাই নিচে তুলে ধরা হলো :
কেন এ ঘটনাকে মিরাকল বলা হচ্ছে : ১. বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো তুষারধসের শিকার হওয়া ৯২ শতাংশ ব্যক্তির জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে যদি তাদেরকে ঘ্টনার প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই উদ্ধার করা যায়।
২. ঘটনার ৩৫ মিনিট পর তুষারধসের শিকার ২৭ শতাংশ ব্যক্তির জীবিত থাকার সম্ভাবনা থাকে।
৩. মৃত্যুর আগে গড়পড়তায় ঘটনার ১০ মিনিট পরপরই শিকার ব্যক্তির মস্তিষ্কের ক্ষতি শুরু হয়ে যায়।
কী তাকে বাঁচিয়ে রাখলো :
সিয়াচেন হিমবাহের সঙ্গে তার মানিয়ে নেয়া [এক্লিমাটাইজেশন] : বিশেষজ্ঞদের মত, হনুমানথাপ্পা বেশ স্বাস্থ্যবান হওয়ায় ও সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটা তাকে অতিরিক্ত শক্তি দিয়েছে। এর ফলে সে এত কম তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পেরেছে।
এয়ার পকেট : তিনি বরফস্তূপের যে জায়গায় [পিট] আটকে ছিলেন সেখানে সম্ভবত এয়ার পকেট ছিল যার মাধ্যমে ন্যূনতম কিছু অক্সিজেন সরবরাহ ছিল। যখন কোনো মানুষের শরীর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে তখন তার হৃৎস্পন্দনও কমে যায় এবং শরীরের পুষ্টিগত প্রয়োজনও তখন সীমিত হয়ে আসে।
স্রেফ ভাগ্য : সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের মত, মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বরফের মধ্যে হনুমানথাপ্পার জীবিত থাকার ঘটনা অলৌকিক।
উদ্ধারে সেনাবাহিনী কী করেছে :
১. ২০ মিটার গভীরে ধাতব বস্তু ও হিট সিগনেচার শনাক্ত করতে সক্ষম বিশেষ রাডার স্থাপন করেছিল তারা। সেইসঙ্গে রেডিও রাডার শনাক্তকও ব্যবহার করেছিল তারা। ভারতীয় বিমানবাহিনীর চপার দিয়ে রাডারকে তুষারের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
২. হেলিকপ্টার দিয়ে বিশেষ ব্যাটারিচালিত স্নো কাটারও সিয়াচেন উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হয়েছিল।
৩. ডট ও মিশা নামে দুটি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরও উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে।
এদিকে, ল্যান্স নায়েক হনুমানথাপ্পাকে বর্তমানে দিল্লিস্থ আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারাল হসপিটালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার অবস্থা বেশ গুরুতর বলে হাসপাতালের এক বুলেটিনে বলা হয়েছে। শ্বাসনালি ও ফুসফুস রক্ষার্থে তাকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়া হচ্ছে। তার কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সে নিউমোনিয়ায় ভুগছে বলেও বুলেটিনে জানানো হয়। পরবর্তী ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেও এতে জানানো হয়। তার সুস্থতার জন্য পুরো ভারতজুড়ে প্রার্থনা চলছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার
বিডি-প্রতিদিন/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শরীফ