পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তার সরকারের সাফল্যের দাবি করলেও বাস্তব পরিস্থিতি যে তার উল্টো তা ধরা পড়লো একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রতিষ্ঠিত প্রতীচি ট্রাস্ট এবং গাইডেন্স গিল্ড ও অ্যাসোসিয়েশন স্ন্যাপ-এর যৌথ জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের দুর্দশার করুণ ছবিটাই উঠে এসেছে।
রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতার গোর্কি সদনে ‘লিভিং রিয়ালিটি অফ মুসলিম ইন ওয়েস্টবেঙ্গল’ শিরোনামে ওই রিপোর্ট পেশ করেন অমর্ত্য সেন।
গত পাঁচ বছরে তৃণমূলের জমানাতেই এই জরিপ করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে রাজ্যটির ৮১টি ব্লকের ৩২৫টি গ্রাম এবং ৩০টি পুরসভার ৭৩টি ওয়ার্ডে। জরিপের সময় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যটিতে মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমদের উপস্থিতির হার, তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ একাধিক বিষয় বিবেচনা করা হয় কিন্তু তাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে মমতার নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার যে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সেই ছবিটাই উঠে এসেছে রিপোর্টে।
জরিপে ধরা পড়েছে রাজ্যটিতে গ্রামে বাস করা ৮০ শতাংশের বেশি মুসলিম পরিবারই দারিদ্র সীমার দোরগোড়ায় বাস করে, যাদের মাসিক আয় ৫ হাজার রুপি কিংবা তারও কম। এর মধ্যে ৩৮.৩ শতাংশ পরিবারের আয় মাত্র ২.৫০০ রুপি। গ্রামে বসবাসকারী মাত্র ১.৫ শতাংশ মুসলিম বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়মিত মাইনে পান। কিন্তু পাবলিক সেক্টরে সেই শতাংশ মাত্র ১ শতাংশ। ১৩.২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম এখনও সচিত্র পরিচয় পত্র (ভোটার কার্ড) পান নি। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের ৩২ শতাংশ মানুষ যেখানে নিকাশি ব্যবস্থার সুবিধা পান সেখানে গ্রামে বসবাসকারী ১২.২ শতাংশ মুসলিমরা এই সুবিধা পান, শহরের ১৯ শতাংশ মুসলিমরা এই নিকাশি ব্যবস্থার সুবিধা পেয়ে থাকেন।
প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রেও চিত্রটা করুণ। ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স্ক এমন ১৫ শতাংশ মুসলিম শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এরমধ্যে ৯.১ শতাংশ কখনও স্কুলের দরজাই পেরোয় নি। আর ৫.৪ শতাংশ শিশু কোন এক কারণ স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়েছে।
রাজ্যটিতে এক লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ১০.৬ শতাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর জেলায় এই পরিমাণটা যথাক্রমে ৭.২ শতাংশ, ৮.৫ শতাংশ এবং ৬.২ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ৮২.১ শতাংশ মুসলিম মানুষকে কোন তথ্য জানার জন্য অন্যের কাছে কিংবা স্থানীয় রাজনীতিবিদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে না আছে কোন রেডিও, না আছে টেলিভিশন এমনকি পত্রিকাও পৌঁছায় না।
বিভিন্ন সমাবেশ থেকে প্রায়ই মুসলিমদের জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায় তার সরকারের কাজের ফিরিস্তি দেন। তিনি দাবি করেন সংখ্যালঘু উন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গই এক নম্বরে। কিন্তু সেই দাবি যে কতটা ঠুনকো তা এই জরিপেই পরিস্কার। সামনেই রাজ্যটিতে বিধানসভার নির্বাচন। সেখানে নির্বাচনের আগে এই জরিপ শাসক দলকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা