ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার 'বদলা' নিতে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পাকিস্তানে কর্মরত মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করেছিল। এক মার্কিন কর্মকর্তাকে বরাত দিয়ে চাঞ্চল্যকর এই খবরটি ফাঁস করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
তাদের রিপোর্টে বলা হয়, ২০১১ সালের মে মাসে লাদেনকে হত্যা করার ছক চূড়ান্ত করে পেন্টাগন। পাক গোয়েন্দা সংস্থাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ওই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কারণ মার্কিন কর্তারা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন, পাকিস্তানকে কখনই বিশ্বাস করা যায় না। আইএসআই ওই অপারেশনের খবর পেয়ে গেলে আল কায়দা প্রধান হাত থেকে ফসকে যেতে পারে, সে খবর মাথায় রাখতেন সিআইএ কর্তারা।
নিখুঁত পরিকল্পনামাফিক লাদেনকে হত্যা করার পর যখন গোটা বিশ্ব জানতে পারে ওই অপারেশনের বিষয়ে, তখনই রাগে ফেটে পড়ে পাক গোয়েন্দা সংস্থা। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও পাকিস্তানে দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন গোয়েন্দাকে বিষ প্রয়োগ করা হয় বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা। এমনকী পাক গোয়েন্দাদের লাগাতার চোরাগোপ্তা হামলার মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে একাধিক সিআইএ কর্তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয় আমেরিকাকা।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে এটাও দাবি করা হয়েছে, লাদেন সপরিবার অ্যাবোটাবাদে আশ্রয় পেয়েছিল পাকিস্তানের সেনা অফিসারদের প্রত্যক্ষ মদতেই। তারা সব জানতেন। জেনেও দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে গিয়েছেন এবং না জানার ভান করে গেছেন।
৯/১১-এর পর এভাবেই আমেরিকাকে এক দশক ধরে বোকা বানিয়ে যাচ্ছিল ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের অফিসাররা। গা-ঢাকা দেওয়া লাদেনের খুঁটিনাটি অবস্থান জানিয়ে নির্ভুল খবর দিয়েছিলেন পাকিস্তানি চিকিৎসক ডাঃ শাকিল আফ্রিদি। এই ‘অপরাধে' দেশ-দ্রোহিতা ও আমেরিকার হয়ে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগ এনে তাকে কয়েক বছর ধরে বিনা বিচারে লাহোরের অন্ধকার সেলে রেখে দিয়েছে পাক সরকার। সবটাই হয়েছে সেনা কর্তাদের গোপন নির্দেশে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাদেন ধরা পড়ার আগেই ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১০ সালে সেই তিক্ততা চরমে পৌঁছায়।
২৬/১১ কাণ্ডে মুম্বাইয়ে জঙ্গি হামলায় পাক সেনা অফিসারদের ষড়যন্ত্র, আইএসআই প্রধান আহমেদ সুজা পাশার ভূমিকা সবটাই আমেরিকার সামনে চলে আসে। আফগানিস্তানে তালিবানকে মদদ, ভারতে সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলা, পাকিস্তানে কর্মরত সিআইএ অফিসারদের হত্যার চক্রান্ত এবং সন্ত্রাস দমনে আন্তরিকতার নাটক করা, মার্কিন সাহায্য নিয়েও পেন্টাগনকে বোকা বানানো ইত্যাদি ঘটনা যে আইএসআই কর্তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত সে ব্যাপারে নিয়মিত পেন্টাগনে গোপন নোট পাঠাতেন সিআইএ-র পাকিস্তান শাখার প্রধান মার্ক কেল্টন৷
লাদেন হত্যার অভিযানের নীল নকশা ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার'-এর অন্যতম অংশ ছিলেন ৫৯ বছরের কেল্টন। আইএসআই তো বটেই এমনকী কাক-পক্ষীও ঘুণাক্ষরে টের পায়নি এই অভিযানের কথা। কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বা গুলি করে সিআইএ কর্মকর্তাকে মেরে ফেলা ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার৷ তাই সাপের বিষ প্রয়োগ করে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। আইএসআই তাদের বিশ্বস্ত গুপ্তচরকে দিয়ে এই কাজটি করাত।
সম্ভবত এই চর ছিল সিআইএ দফতরের কোন পাকিস্তানি কর্মী। নিয়মিতভাবে ধীরে ধীরে বিষপ্রয়োগের কাজটি করা হত। কারণ লাদেন হত্যার পরও অবসরের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা কেল্টনের আরও সাত আট মাস চাকরির মেয়াদ ছিল। কিন্তু হঠাৎই তার শারীরিক অবস্থার এত অবনতি হয় যে কোন ওষুধেই কাজ হচ্ছিল না। তাকে দ্রুত আমেরিকায় ফিরিয়ে এনে জটিল অপারেশন করানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ মে, ২০১৬/ হিমেল-০৬