উত্তর কোরিয়া এবং দেশটির নেতারা বিচিত্র সব কাণ্ড দিয়েই সব সময় আলোচনায় থাকে। কিম পরিবারের কুমারী সঙ্গ এখন কারও কাছেই অজানা নয়। দেশটির নেতাদের বক্তৃতার সময় কেউ ঠিকঠাক বসেনি, সে কারনে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এইতো দিন কয়েক আগেইতো ঘুমিয়ে পড়ার জন্য দুই জন নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হল।
সামান্য বিচ্যুতিতে দেশটির শীর্ষস্থানীয় কমকর্তা থেকে সাধারণ জনগণ, কারও রক্ষা নেই। আবারও কিম পরিবার আলোচনায় এসেছে।
এবারের কাণ্ড একটু ভিন্ন। তরুণ বয়সে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান নেতা কিম জং উনের ইংরেজি শেখার জন্য কিম দ্বিতীয় সাং এক মার্কিন নাগরিককেই অপহরণ করে বসেন।
চীনের ইউনানা প্রদেশ থেকে অপহৃত হন ২৪ বছর বয়সী ব্রিংহ্যাম ইয়াং ইউনিভার্সিটির মার্কিন ছাত্র ডেভিড স্নেডন। ঘটনাটি ২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময়ের।
সে সময়ে স্নেডনের পরিবার চীনে ব্যাপক প্রচারণা চালায় তাদের ছেলের সন্ধানে। কিন্তু, চীন কর্তৃপক্ষ ভ্রমণে গিয়ে ওই যুবক নিহত হয়েছেন বলে ঘোষণা দেয়। তবে তার লাশের কোনো খোঁজ তারা দিতে পেরেছিল না। স্নেডনের সন্ধানে চীনে বাবা ও বড় ভাই তবু হাল ছেড়ে দেননি।
এরপর ১২ বছর কেটে গেছে। এখন জানা গেল, উত্তর কোরিয়া ডেভিড স্নেডনকে চীন থেকে অপহরণ করেছিল। তিনি এখন দেশটির রাজধানী পিয়ংইয়ংয়েই আছেন। শুধু তাই নয়, সেখানে বিয়ে করেছেন। এখন তার দুটি সন্তানও হয়েছে।
কিন্তু এই অপহরণের নেপথ্যে ছিল, তখনকার তরুণ ও বর্তমান উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জন উনকে ইংরেজি শেখাতে একজন গৃহশিক্ষকের প্রয়োজন ছিল। আর সেই প্রয়োজন মেটাতেই অপহরণ করা হয় ডেভিড স্লেডনকে।
অবশ্য ডেভিড স্নেডনের এই অপহরণের তথ্য প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির নেতা ছই সাং-ইয়ং ডেভিড স্নেডনের একটি পারিবারিক ছবিও প্রকাশ করেছে।
ছবিতে স্নেডনের বাবা ও মাতিনি বলেছেন, স্নেডন পিয়ংইয়ংয়ে বাচ্চাদের ইংরজি শেখান এবং স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন।
এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ডেভিড স্নেডনকে পেতে যোগাযোগ শুরু করেছে। এছাড়া মার্ক রুবিও সিনেটে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছেন।
আর ছেলের সন্ধান পেয়ে অভিভূত তার বাবা রায় ও মা ক্যাথলিন স্নেডন। ডেভিড স্নেডেনের মা বলেন, 'আমরা সব সময় আমাদের অন্তরকে বলতাম- ও বেঁচে আছে। শেষ পর্যন্ত সেটিই সত্য।'
ডেভিড স্নেডনকে সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট টাইগার লিপিং জর্জ টেইল শহরের অদূরে শানগিরি-লা রেস্তোরাঁ থেকে বের হতে দেখা গেছে।
অবশ্য এরপর ২৬ আগস্ট থেকেই আবার তিনি লাপাত্তা। ওইদিন স্নেডন সিউল বিমানবন্দরে তার ভাই জেমস স্নেডনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।পরিবারের অ্যালবামে স্নেডন
স্নেডনের মা-বাবার ধারণা, তার সন্তান কোরিয়ান ভাষায় খুবই দক্ষ। দক্ষিণ কোরিয়ার মরমন মিশনে কাজ করার সময়ই সে উত্তর কোরিয়ার টার্গেটে পরিণত হয়।
ছেলের সন্ধান বিষয়ে স্নেডনের বাবা রায় স্নেডন জানান, সিউলের অদূর থেকে এক মার্কিন নাগরিকের করা ফোন আমি রিসিভ করি। সে জানায়, তার স্ত্রী উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে এসেছে এবং এখন তারা একটি লোকালয়ে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী এখন বলতে পারছি- ছেলেকে ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আমরা খুবই আশাবাদী। তবে এজন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।
অবশ্য ডেভিড স্নেডনই উত্তর কোরিয়ার প্রথম অপহরণের শিকার এমন নন। জাপান সরকারের তথ্যে, ভাষা শেখানোর জন্য কিম দ্বিতীয় সাং ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ১৭ জন জাপানের নাগরিককে অপহরণ করেছিল।
এছাড়া পঞ্চাশের দশকে উত্তর কোরিয়ার বিখ্যাত পরিচালক শিন সাং-ওকে এবং তার সাবেক স্ত্রী অভিনেত্রী ছই ইয়ুন-হিকেকেও অপহরণ করেছিল উত্তর কোরিয়া।
সূত্র- ডেইলিমেইল
বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর