ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ইডাপড্ডি.কে.পালানিস্বামী (৬৩)। কারাগারে যাওয়ার আগে অল ইন্ডিয়া দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাঝাগাম (এআইএডিএমকে)-দলের সাধারণ সম্পাদক শশীকলা নটরাজন(৬১) তাকে বিধায়কদের দলনেতা হিসাবে মনোনীত করে যান। বৃহস্পতিবার সেই পালানিস্বামীকেই সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন রাজ্যটির রাজ্যপাল সি.বিদ্যাসাগর রাও। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজভবনে রাজ্যটির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন তিনি।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আস্থাভোটের মাধ্যমে প্রথমে সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে পালানিস্বামীকে। ২৩৫ সদস্য বিশিষ্ট তামিলনাড়ুতে গরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য দরকার ১১৭ জন বিধায়ককের সমর্থন। কিন্তু সত্যিই তার সঙ্গে কতজন বিধায়ক আছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও শশীকলা শিবিরের নেতা-নেত্রীরা বলছেন, তাদের কাছে ১২৪ বিধায়কদের সমর্থন রয়েছে। এবং প্রত্যেকেই মহাবলীপুরমের গোল্ডেন বে রিসোর্ট রয়েছেন। সেখানে কাউকেই জোর করে রাখা হয়নি, প্রত্যেকেই নিজের ইচ্ছায়, শশীকলার সমর্থনেই রয়েছেন।
এদিন সকালেই পালানিস্বামী দলের কয়েকজন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে তাঁর সমর্থনে কতজন বিধায়ক রয়েছে তার একটি তালিকা তুলে দেন রাজ্যপালের হাতে। এরপরই রাজ্যপাল তাঁকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রন জানান। রাজ্যপালের এই আমন্ত্রণের পরই শশীকলা শিবিরে উৎসাহের রেশ ছড়িয়ে পড়ে।
আয় বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় গত মঙ্গলবার শশীকলাকে চার বছরের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে জরিমানা করা হয় ১০ কোটি রুপি। শীর্ষ আদালতের রায়ের ফলে চার বছর সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের ছয় বছর তিনি আর কোন ভোটেই দাঁড়াতে পারবেন না। ফলে আগামী ১০ বছরের জন্য রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে থাকতে হবে তাঁকে। এই অবস্থা থেকেই চেন্নাইয়ে এআইএডিএমকে-দলের বৈঠকে ‘প্রক্সি সিএম’ হিসাবে ই.কে.পালানিস্বামীকে নির্বাচিত করেন শশীকলা। পাশাপাশি বিধায়ক দলের নেতা হিসাবেও তাঁকে মনোনীত করা হয়। কারণ পালানিস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসালে সরকারের রাশ নিজের হাতেই রাখতে পারবেন শশীকলা। তাই পালানিস্বামী মুখ্যমন্ত্রী পদে বসবেন বটে, কিন্তু বেঙ্গালুরুর পারাপ্পানা অগ্রহারা কেন্দ্রীয় কারাগারে বসেই ছায়া মুখ্যমন্ত্রী হবেন সেই শশীকলাই।
উল্লেখ্য গত বছরের ৫ ডিসেম্বর জয়ললিতার মৃত্যুর পরই ওইদিন রাতেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন পনিরসেলভম। এর কয়েকদিন পরে এআইএডিএমকে-দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শশীকল। কিন্তু এরপরই তৈরি হয় নতুন সমস্যা। পনিরসেলভমকে সরিয়ে তাঁরই মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য শশীকলাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানোর জন্য দাবি তোলেন। এরপরই গত ৫ ফেব্রুয়ারি চেন্নাইয়ে দলের বিধায়কদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন পনিরসেলভম এবং রাজ্যপাল সি.বিদ্যাসাগর রাওয়ের কাছে নিজের পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন তিনি। অন্যদিকে বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচিত করা হয় শশীকলাকে। যদিও নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত পনিরসেলভমকেই কেয়ারটেকার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন রাজ্যপাল। কিন্তু দুইদিন পর হঠাৎ করেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন পনিরসেলভম। শশীকলার বিরুদ্ধে তোপ দেগে পনির জানান মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্থফা দিতে তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর থেকেই গত দশদিন ধরে তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছিল। সরকার গঠনে একটু ধীরে চলো নীতি নিয়েছিলেন রাজ্যপালও। কিন্তু এরই মধ্যে আয় বহির্ভূত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বুধবার রাতে শশীকলা কারাগারে যাওয়ার পর থেকে অচলাবস্থা কাটতে থাকে।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব