গত বছরের নভেম্বর মাসে ভারতের মুম্বাইয়ে একটি অভিজাত পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাঙ্গেরির বাসিন্দা এন্সি টোথ৷ ভারতীয় বিয়ে সেই প্রথম তার কাছ থেকে দেখা৷ তার পর এ পর্যন্ত দশটি বিয়েতে হাজির হয়েছেন হাঙ্গেরির এই তরুণী৷ ঘুরেছেন জয়পুর, উদয়পুর, ইন্দোর, কানপুর, দিল্লি, বাংলার বর্ধমান৷
চার মাস ধরে ভারতে ঘুরে বেড়ানো এন্সি টোথ এখন শুরুর দিনের কথা ভেবে হেসে ফেলে বলেন, "প্রথম বিয়েবাড়িতে কয়দিন কাটানোর পর নিজেকে বলেছিলাম, যাক এখন আমি জানি কী ভাবে ভারতে বিয়েটা হয়৷ কিন্তু দ্বিতীয় , তৃতীয় বিয়েতে গিয়ে বুঝতে পারি, কী মস্ত বড় ভুল ভেবেছিলাম , সব বিয়েই তো সম্পূর্ণ আলাদা।’
ভারতীয় বিয়ের এই বৈচিত্রই বিশ্ববাজারে তুলে ধরছেন এন্সি৷ ভারতে ঘুরতে আসা বিদেশিদের কাছে বিক্রি করছেন চিন্তা-ভাবনাকে। দিনপ্রতি মাত্র ৭৫ ডলার খরচ করলেই ‘বিগ ফ্যাট ইন্ডিয়ান ওয়েডিং ’-এর আপনিও অতিথি হয়ে যেতে পারেন৷
বিয়ে পর্যটনের এই ভাবনা আদতে হাঙ্গেরিরই আরেক তরুণীর৷ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া নিবাসী ওরসি পারকানয়ি গত বছর চালু করেন 'জয়েনমাইওয়েডিং' ওয়েবসাইটটি৷ তার বন্ধু মার্তা মাটেক্সা নিমন্ত্রিত হিসেবে এসেছিলেন তামিলনাড়ুর একটি বিয়েবাড়িতে৷ বিপুল আয়োজন আর উদ্দীপনার গল্প দেশে ফিরে বন্ধু ওরসিকে শোনান মার্তা৷ জন্ম নেয় বিয়ে নিয়ে পর্যটনের ভাবনা৷
গত নভেম্বরে এদের সঙ্গে আলাপ হয় হাঙ্গেরিরই ছটফটে এক তরুণীর৷ মাত্র দেড় বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেছেন৷ পড়ার ফাঁকে দু’দফায় ঘুরে বেরিয়েছেন আমেরিকা৷ ব্যাগপ্যাক ট্রিপ করেছেন ইউরোপের স্নোভেনিয়া, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, জার্মানিতে৷ গিয়েছেন দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, কলম্বিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায়৷ ঘোরার ফাঁকে কোথাও উদ্বাস্ত্ত স্কুলে পড়িয়েছেন তো কোথাও হোটেলে কাজ৷ ওরসিদের কাছে ভাবনা শুনে শুরুতেই ভালো লেগে যায় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মেয়ের৷ জার্মানিতে চাকরির অফার থাকলেও চলে আসেন ভারতে৷ একাই৷
সেই থেকে ঘুরে চলেছেন ভারতের প্রায় সব জায়গায়৷ মুম্বইয়ে পর পর দু’টি বিয়ে দেখে একরকম ধারণা হয়েছিল এন্সির৷ হাজার হাজার লোক , বিয়ের মঞ্চে জিপ , নর্তকী , তারাবাজি , অসংখ্য স্ক্রিন৷ এরপর এনসির গন্তব্য হয় বর্ধমান৷ সেখানে ডিভিসি কলোনিতে বিশ্বজিত্ আর চন্দ্রমা দেবদাসের বিয়েতে তিন দিন কাটিয়ে ধারণাটাই বদলে যায় তার। এন্সি বলেন, ‘এত বন্ধুত্বপূর্ণ ওরা। মনে হচ্ছিল আমি যেন ওই পরিবারেরই একজন৷ ’
এরপর রাজস্থানি বিয়ের স্বাদ পেয়েছেন জয়পুর -উদয়পুরে৷ কানপুরে আরেক অভিজ্ঞতা৷ সোশ্যাল সাইটে ভারতীয় যুবকের প্রেমে পড়ে মার্কিন তরুণীর কানপুরে চলে আসা এবং বিয়ে৷ বাড়তি পাওনা এন্সির মা থেকে শুরু করে তার মার্কিন বয়ফ্রেন্ড সকলেই এসেছিলেন সেই বিয়েতে৷
তারপর কলকাতা৷ কথা ছিল শ্রীরামপুরে শুভজিত-প্রিয়া অধিকারীর বিয়েতে থাকার৷ কিন্তু শরীর সঙ্গ দেয়নি৷ রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের হোটেলে বসে উত্তেজিত এন্সি জানান, ‘এবার গোয়ায় যাব৷ পাত্র মুসলিম, পাত্রী হিন্দু৷ বাড়ি থেকে মানেনি৷ কিন্তু ওরা দুনিয়াকে থোড়াই কেয়ার করেছে। এই ব্যাপারটা দারুণ লেগেছে৷’
বিয়েবাড়িতে যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে হোস্টেলে, হোটেলে ঘুরে বেড়ান এন্সি৷ বিদেশিদের কাছে পর্যটনের নয়া ভাবনা পৌঁছে দেন৷ তার তোলা ছবি, ভিডিওতেই নতুন করে সাজছে ওয়েবসাইট৷ সেখানে আরও তথ্য জুগিয়েছে তার গবেষণা৷ সবটাই এন্সির চার মাসের খাটনির ফসল৷ বিনিময়ে শুধু খরচ পান থাকা-খাওয়া আর যাতায়াতের৷
তবে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাই এন্সির কাছে বেতন৷ তিনি বলেন, ‘বিয়ের জমকালো সাজসজ্জা, বিভিন্ন রাজ্যের খাবার চেখে দেখার অভিজ্ঞতাই বড় পাওনা৷ ভারতীয় বিয়েতে যে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয় , তার তুলনায় ৭৫ ডলার কিছুই নয়৷ এই ভাবনা আদতে সংস্কৃতির আদানপ্রদানের সুযোগ করে দেওয়ার৷ বিয়ের মতো একটা ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে পর্যটনের জানালা খুলে দেওয়ার৷’
সূত্রঃ এই সময়।
বিডি-প্রতিদিন/ ৮ মার্চ, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৪