রবিবার দিবাগত রাত নর্থ লন্ডনে ফিন্সবারি পার্ক মসজিদের কাছে এক সন্ত্রাসী হামলায় ১ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। রাত ১২টার পর তারাবির নামাজ-ফেরত মুসল্লিদের ওপর ভ্যান উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তি একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বলে জানা গেছে।
হামলায় নিহত ব্যক্তির নাম মাকরাম আলী (হিরন মিয়া)। তার দেশের বাড়ী সিলেটের বিশ্বনাথ থানার স্বরওয়ালা গ্রামে। তিনি তার পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ফিন্সবারী পার্কে বসবাস করে আসছেন। বৃটিশ বাংলাদেশি। তার আনুমানিক বয়স হবে ৫২ বলে নিহতের মেয়ে মিসেস ফারজানা নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের কন্যা ফারজানা জানান, প্রতি রমজানের মতো গতরাতে তার বাবা মসজিদে যান তারাবী পড়তে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার বাবা নামাযের পর সন্ত্রাসী কতৃর্ক ভ্যান পিস্ট হয়ে নিহত হন। তিনি তার বাবার হত্যাকারীর বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ইসলামিক রিলিফের সিনিয়র ফান্ড রেইজিং অফিসার সুলতান আহমেদ জানিয়েছেন, তাঁর মামাও ঘটনাস্থলে ছিলেন। মসজিদ ছাড়ার পর তাঁর মামার চোখের সামনেই ভ্যানটি মুসল্লিদের ওপর উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে প্রবীণ ওই বাংলাদেশি মারা যান।
সুলতান আহমেদ আরো জানান, নিহত ব্যক্তির শরীরে পেস ম্যাকার লাগানো ছিল। নামাজ থেকে বের হবার পর তিনি অসুস্থবোধ করছিলেন। এসময় তিনি মাটিতে বসে যান। তাকে সহযোগিতার জন্য অন্যান্য মুসল্লিরা জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে তার সুলতানের মামাও ছিলেন। এ সময় পূর্ব থেকেই অপেক্ষারত একটি ভেন জটলার উপর তুলে দেয়।
ফিন্সবারি হলো লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের নির্বাচনী এলাকা। হামলাকারীরা পালাবার সময় উপস্থিত মুসল্লিরা তাকে আটক করে মারধর করতে শুরু করে। মসজিদের কমিটি তাকে রক্ষা করেন। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে।
তিনজন ব্যক্তি হামলাকারীকে আটক করেছিলেন। তাঁদের একজন মোহাম্মদ বলেন, আটকের পর স্থানীয় ইমামের ভূমিকা ছিল প্রশংসাজনক। তিনি রোজার মাসে সবাইকে সংযম ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে হামলাকারীর কোনো ক্ষতি করা থেকে অন্যদের বিরত করেন। পরে পুলিশ এসে সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেফতার করে।
স্থানীয় এক ক্যাফের মালিক ২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, ‘ওই ইমামের কারণেই হামলাকারী লোকটি এখনো জীবিত আছে।’
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে ওই ইমামের নাম মোহাম্মদ মাহমুদ। ফিন্সবারি পার্কের মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউসের নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম মাহমুদের প্রশংসা করে বলেন, তাঁর কারণেই হামলার পরের পরিস্থিতি শান্ত করা গেছে এবং সম্ভাব্য জীবননাশের ঘটনা এড়ানো গেছে।
জেরেমি করবিন হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দলের এই নেতা বলেন, ‘আমি একে অন্যান্য হামলার মতোই অতীব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি’।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এক বিবৃতিতে নিহতের জন্য শোক প্রকাশের পাশাপাশি হামলার ঘটনাটিকে উন্মত্ত সন্ত্রাসী হামলা বলেছেন।
সেভেন সিস্টারস রোডের একটি ফ্ল্যাট বাস করা এক নারীর ভাষ্য, লোকজনকে তিনি চিৎকার ও আর্তনাদ করতে দেখেছেন। একটি ভ্যান লোকজনের ওপর উঠে যাচ্ছে বলে সবাই চিৎকার করে বলছিল। মসজিদের বাইরে একটি সাদা ভ্যান থেমে ছিল। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা লোকজনকে ভ্যানটি আঘাত করছিল বলে মনে হয়।
হামলাকে ‘গুরুতর ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছে লন্ডন পুলিশ। তারা বলছে, রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের খবর দেওয়া হয়। জানানো হয়, একটি ভ্যান মুসল্লিদের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিরা নামাজ শেষ মসজিদ থেকে বেরিয়েছিলেন।
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) বলেছে, মুসল্লিদের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি ভ্যান তুলে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি যুক্তরাজ্যের মসজিদ ঘিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দাবি করেছে।
এদিকে সোমবার দুপুরে টাওয়ার হ্যামলেটের ইষ্ট লন্ডন মসজিদে এক পরিত্যাক্ত মোবাইলকে কেন্দ্র করে বোমাতঙ্ক তৈরি হলে মসজিদ খালি করে দেয়া হয়। উল্লেখ্য ইষ্ট লন্ডন মসজিদে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজারের বেশি মুসুল্লি নামাজ পড়ে থাকেন।
স্থানীয়রা বলেছেন, এলাকাটিতে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিয়ে তাঁরা গর্বিত ছিলেন। কিন্তু এখন মুসলমানদের মধ্যে ভীতি জন্মাতে দেখা যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/ ১৯ জুন,২০১৭/ ই জাহান