অাসামে জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া রিপোর্টকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠছে ভারতের রাজ্য-রাজনীতি। খসড়া তালিকা থেকে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বাদ পড়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি সমালোচনা চলছেই। মঙ্গলবার সকালে প্রথম এই বিতর্কের আঁচ পড়ে দেশটির সংসদে। সকালে অধিবেশনের শুরুতেই এই ইস্যুতে উত্তাল হয় সংসদের উভয়কক্ষ (রাজ্যসভা ও লোকসভা)।
কোমর বেঁধে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরোধিতায় নামে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলি। এদিন রাজ্যসভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এনআরসি ইস্যুতে সরাসরি কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে বলেন ‘এনআরসি তৈরি করা হয়েছে শরণার্থীদের চিহ্নিতকরণের জন্য। ১৯৮৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আমলে অাসাম চুক্তি হলেও কংগ্রেস তা কার্যকর করার সাহস দেখাতে পারেননি। মোদি সরকার তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে। আর এরপরই বিরোধীরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখায়। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছায় যে প্রথমে কিছুক্ষণের জন্য মুলতুবি হলেও, পরে সারাদিনের জন্য মুলতুবি হয়ে যায়।
পরে সন্ধ্যায় দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনেও অমিত শাহ বলেন ‘দেশে অনুপ্রবেশকারীদের কোন জায়গা নেই। কারণ অনুপ্রবেশের জন্য অাসামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে, মানুষ মারা যাচ্ছে, কাজ হারাচ্ছে’। তাঁর দাবি ‘কোন ভারতীয়ের নাম বাদ রাখা হয়নি। যারা তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে পারেন নি, তাদেরই নাম বাদ গিয়েছে’।
লোকসভাতেও কেন্দ্রের ওপর চাপ তৈরি করে বিরোধীরা। কেবল সংসদের ভিতরেই নয়, সংসদরে বাইরেও একই ইস্যুতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয় তৃণমূল সহ বিরোধী সাংসদরা।
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় সংসদের বাইরে দুই সাংসদের তর্কাতর্কি। এনআরসি ইস্যুতেই বিজেপি সাংসদ অশ্বিনী চৌবের সঙ্গে প্রবল তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। পরে অবশ্য অন্যান্য সাংসদদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
উল্লেখ্য, সোমবার ভারতের অাসাম রাজ্যে প্রকাশিত হয় নাগরিকদের (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসি)’এর চূড়ান্ত খসড়া তালিকা। এনআরসি’এর কাছে জমা পড়া ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারির মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৬৭ জনের নাম। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অাসামের প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম। আর এরপরই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। মঙ্গলবার সেই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই সংসদের মধ্যে সুর চড়ায় বিরোধীরা।
বিডি প্রতিদিন/৩১ জুলাই ২০১৮/হিমেল