ভারতের আসাম রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, 'মুসলিমদের তো গোট দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর হিন্দুদের কেবলমাত্র নাগরিকত্ব দিচ্ছি।'
শুক্রবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ২০১৯’ প্যানেল ডিসকাসনে অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি। ওই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) সভাপতি আসাউদ্দিন ওয়েইসি।
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সম্পর্কিত একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে হিমন্ত বিশ্ব জানান, ‘আসামের পরিপ্রেক্ষিতে আমি নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল-কে পুরোপুরি সমর্থন জানাই। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আগত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য এটা আমাদের ঐতিহাসিক অঙ্গীকার।’
তিনি আরও জানান ‘আমরা হিন্দুদের কেবলমাত্র নাগরিকত্ব দিচ্ছি। কিন্তু আমরা মুসলিমদের একটা গোটা দেশ দিয়েছি। আমরা মুসলিমদের পাকিস্তান দিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যেই মুসলিমদেরকে অনেকগুলো দেশ দিয়েছি। এখন হিন্দু, খ্রিষ্টান সহ কয়েকটি সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিচ্ছি।’
‘ভারত হিন্দু রাষ্ট্র ছিল না’ উল্লেখ করে হিমন্ত বিশ্বকে উদ্দেশ্য করে আসাউদ্দিন উয়েইসি বলেন, ‘আসামের একজন মন্ত্রী হিসাবে হিমন্ত বিশ্ব ‘অাসাম চুক্তি’ লঙ্ঘন করছেন। তিনি কেন হিন্দু ও খ্রিষ্টানদেরই ধর্মীয় নিপীড়িত হিসাবে ধরে নিচ্ছেন।’
আলোচনাকালীন সময়ে আসাউদ্দিন ওয়েইসি আসামের অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান তিনি ভারতকে বিভক্ত করতে চাইছেন কি না? জবাবে হিমন্ত বিশ্ব বলেন, ‘আমার মনে হয় আপনি অাসামকে আরেকটা কাশ্মীর বানাতে চাইছেন।’
এদিকে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল পাশ হলে মেঘালয়ে জোট সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যশানাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) প্রধান কনরাড সাংমা। কনরাড বলেন, ‘উত্তরপূর্বের মানুষ অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে খুব সংবেদনশীল। একটি দল হিসাবে আমাদের নিজস্ব কিছু পরিচয় রয়েছে এবং আমাদের অভিমত, ধারনা পোষণ করার অধিকার রয়েছে। আমি জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)-এর নেতাদেরকে একটা বিষয় পরিস্কার করে জানিয়ে দিতে চাই যে, বিলটি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে এটিকে যদি সংসদে পাশ করা হয় তবে এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসবো।’
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলটিতে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ-এই তিন রাষ্ট্র থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি ও খ্রিস্টান-এই ছয়টি সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আসায় নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ১২ বছরের বদলে মাত্র ৬ বছর দেশে বসবাস করলেই তারা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন, এমনকি তাদের কাছে এসম্পর্কিত কোন নথি না থাকলেও নাগরিকত্ব প্রদানে কোন বাধা থাকবে না।
ইতিমধ্যেই গত ৮ জানুয়ারী ভারতের লোকসভায় পাশ হয়েছে এই বিলটি। বিতর্কিত এই বিলটিকে কেন্দ্র করেই আসামসহ উত্তরপূর্ব ভারতে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ চলছে। এমনকি এই বিলের প্রতিবাদে অাসামে বিজেপি জোট সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় অাসাম গণ পরিষদ (অগপ)। আর এই বিল নিয়ে বিতর্কের জেরেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যসভার বাজেট অধিবেশনেও তা পাশ করা সম্ভব হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল