ভারতীয় ইসলামী প্রচারক জাকির নায়েক মালয়েশিয়ায় হিন্দু এবং চীনা সম্প্রদায় সম্পর্কে তার স্পর্শকাতর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে আহত করার উদ্দেশ্যে তিনি কোন মন্তব্য করেননি এবং তার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জাকির নায়েককে ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে বহিস্কারের দাবি উঠেছে।
জাকির নায়েক এর আগেও বহুবার তার কথাবার্তার জন্য বিতর্কিত হয়েছেন। টেলিভিশনে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলাকে তিনি 'নিজেদের কাজ' (ইনসাইডার জব) বলে বর্ণনা করেছিলেন।
২০১৬ সালে ভারতে তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে উস্কানি দেয়া এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠলে তিনি মালয়েশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে তাকে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
কী বলেছিলেন তিনি
জাকির নায়েক তার বিতর্কিত মন্তব্যে বলেছিলেন, মালয়েশিয়ার হিন্দুরা ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের চেয়েও একশো গুণ বেশি অধিকার ভোগ করে। তার এই মন্তব্য ঘিরে মালয়েশিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।
তাকে মালয়েশিয়া থেকে বের করে দেয়ার আগে সেখান থেকে চীনাদের বের করে দেয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
বিতর্কিত এই মন্তব্যের পর পুলিশ এ বিষয়ে তাকে গত সোমবার দশ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
তবে মঙ্গলবার দেয়া এক বিবৃতিতে জাকির নায়েক বলেন, তার কথাকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে উদ্ধৃত করা হচ্ছে এবং বিকৃত করা হচ্ছে। তিনি দাবি করছেন, কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে বিক্ষুব্ধ করা তার লক্ষ্য ছিল না।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, জাকির নায়েক তার সীমা লঙ্ঘন করেছেন। কয়েকজন মন্ত্রী তাকে মালয়েশিয়া থেকে বহিস্কার করার দাবি তুলেছেন।
মালয়েশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা বার্নামা জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় কোন প্রকাশ্য সভায় তার বক্তৃতা দেয়া নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মুসলিম। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভারতীয় এবং চীনা বংশোদ্ভূত মানুষও রয়েছে।
কে এই জাকির নায়েক
মুম্বাইয়ের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা ডংগ্রিতে ১৯৬৫ সালে এক ডাক্তার পরিবারে জাকির নায়েকের জন্ম ।
তার বাবা ছিলেন চিকিৎসক, তার বড় ভাইও চিকিৎসক।
সেন্ট মেরিস হাইস্কুলে লেখাপড়া শেষ করে তিনি মুম্বাইয়ের টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়েন। ১৯৯১ সালে ডাক্তারি ছেড়ে দিয়ে ডংগ্রিতেই তিনি গড়ে তোলেন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা।
২০১০ সালে 'অগ্রহণযোগ্য ব্যবহার' এবং বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজানে হামলার পর।
২০১৬ সালের নভেম্বরে ভারতের কাউন্টার টেররিজম এজেন্সি ধর্মকে পুঁজি করে ঘৃণা ছড়ানো এবং অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য নায়েকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনে। এরপর ২০১৭ মালে নায়েক মালয়েশিয়ায় চলে যান। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত
