পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীর পরিস্থিতিই সামলাতে পারছে না তার ওপর পাক শাসিত কাশ্মীর (পিওকে) দখল নেবে? ১৯৯৪ সালে ভারতের সংসদের উভয় কক্ষেই সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছিল-তাতে বলা হয়েছিল যে পাক শাসিত কাশ্মীর-ভারতের মধ্যে আনা উচিত। কয়েকদিন আগে একজন সাংসদ হিসাবে এই বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন যে ‘রক্ত দিয়ে আমরা পিওকে নিয়ে আসবো’। কিন্তু বর্তমান সরকার তো কাশ্মীর সমস্যাই তারা সামলাতে পারছে না। কাশ্মীর নিয়ে তারা বলছে সারা ভারতের সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কাশ্মীর আমাদের মধ্যে চলে এল।
কিন্তু আজ বাংলার মানুষ দুর্গাপূজায় কাশ্মীরে যেতে পারছে না। ২৫ হাজার হোটেলের বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। সমস্ত ট্রেন, বিমানের বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। আগে কাশ্মীর আমাদের কাছে গম্য ছিল, এখন অগম্য হয়ে গেছে। আগে আমরা কাশ্মীরে যেতে পারতাম, এখন পারছি না। এটার নাম-ই কি কাশ্মীরের দখল? এখন আমরা যদি বলি যে কাশ্মীরের ৮০ শতাংশ মানুষই জঙ্গি, তবে ভারতের গণতান্ত্রিক চেহারার সাথে তা মানায় না। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যে লড়াই তা নরেন্দ্র মোদি শুরু করেননি, দীর্ঘদিন ধরেই যে কোন সরকারের অধীনে সেখানকার সামরিক বাহিনী করে আসছে।
তিনি বলেন, যে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হল সেই কাশ্মীরের মানুষ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও একটা দিন যারা পাকিস্তানে যায়নি, সেইদিনই কেন্দ্রীয় সরকারের বোঝা উচিত ছিল যে আমরা কোন পথে চলবো। যে কাশ্মীরের মানুষ স্বেচ্ছায় ভারতের সাথে থাকলো তাদেরকে জোর করে যদি পাকিস্তানি বানানোর চেষ্টা করি তাতে ভারতেরই ক্ষতি হবে।
বুধবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিবশ পরগনা জেলার বারাসতে জেলা আদালতে একটি মামলার শুনানিতে হাজিরার ফাঁকে গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেস সাংসদ এসব কথা বলেন।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এর নামে মুসলিমদের বিতাড়িত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কংগ্রেস সাংসদ। পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু করা নিয়ে বিজেপি নেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে অধীর বলেন, এর আগে নরেন্দ্র মোদি সরকার বলেছিল ১৫ লাখ রুপি করে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। এখন বলছে এনআরসি করে সব বিদেশিদের চিহ্নিত করা হবে। আর বিদেশিদের চিহ্নিত করার অর্থ হল মুসলমানদের চিহ্নিত করা। বিজেপির সরকার জম্মু-কাশ্মীরে লেজে গোবরে হয়েছে। মুসলমানদের চিহ্নিত করতে গিয়ে আসামে ১৯ লাখের মধ্যে ১৪ লাখ হিন্দুর নাম বাদ গেছে। এটাও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের আরেকটা রাজনীতি হচ্ছে। এটারও পরিণতি আগেরটার মতো হবে-যেমনটা মোদি সরকার বলেছিল ১৫ লাখ রুপি আমাদের ব্যাঙ্কে দিয়ে দেবে।
তার অভিমত এনআরসি আসাম কেন্দ্রিক বিষয়। তার প্রশ্ন কেন্দ্রের যদি এতই ক্ষমতা থাকে তবে বিজেপি শাসিত রাজ্যে এনআরসি এখনও চালু করা হলো না? আগে বিজেপি শাসিত রাজ্যে এনআরসি চালু করুক তারপর বাংলায় এসো। এগুলির মধ্যে দিয়ে বাংলার রাজনৈতিক বাতাবরণকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি বিপর্যয় নিয়েও কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান তিনি। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে ‘ধামাকা’র সরকার বলে কটাক্ষ করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা বলেন ‘এই সরকার ধামাকায় বিশ্বাস করে, ফলে মানুষের জন্য তাদের ভাবার সময় নেই। কখনও টেলিভিশন, কখনও সোশ্যাল মিডিয়া, কখনও শ্যুটিং করা-এই নিয়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত। ফলে দেশের অর্থনীতি নিয়ে তার ভাবার সময় নেই।’
অধীরের মতে নোট বাতিলের সময় থেকেই ভারতের আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছে। সেসময়ই রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ২ শতাংশ কমে যাবে, ভবিষ্যতেও তাই হল।’
তিনি আরও জানান ‘নরেন্দ্র মোদির সরকার আসার পর গোটা স্বৈরাচারী মানসিকতার দ্বারা গোটা ভারতকে তিনি পরিচালিত করতে চাইছেন। এই সরকারের কোন লক্ষ্য, দিশা নেই, চিন্তা নেই।’
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা