দরজা-জানালা বন্ধ করে আতঙ্কে কার্যত ঘরবন্দী জাপানের মানুষজন। বাস-ট্রেনে লোক চলাচল কম। বাতিল করা হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি ফ্লাইট। এভাবে সপ্তাহান্তে থমকে গেছে টোকিওর জীবন। বিধ্বংসী ঘূর্ণঝড় ‘হাগিবিস’ আছড়ে পড়তে পারে যে কোনও সময়। শক্তি বাড়িয়ে একটু একটু করে জাপানকে গ্রাস করতে এগিয়ে আসছে শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম এই ঝড়!
জাপানের আবহাওয়া দফতর এবং টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার জানিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে টোকিওতেই। ১৩০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগে আছড়ে পড়বে এই ঝড়। সঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টি। হাগিবিসের গতিপথ সনাক্ত করেছে নাসার ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া)-র পাঠানো সুয়োমি এনপিপি স্যাটেলাইট। নাসা জানিয়েছে, শতাব্দীর এটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় হতে চলেছে।
‘ক্যাটেগরি ১’ পর্যায়ের ঘূর্ণিঝড় হাগিবিসের প্রভাবে টোকিওর মেট্রোপলিটন এলাকা-সহ জাপানের কান্ট-কোশিন অঞ্চলে বাড়িঘর ভেঙে পড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। সমুদ্রে ৪১-৪৫ ফুট উঁচু ঢেউ ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার শহরগুলোকে খালি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় সপ্তাহান্তে রাগবি বিশ্বকাপের দুটো ম্যাচ বাতিল হয়েছে।
আজ থেকেই সমস্ত ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ। এনএ এবং জাল বাতিল করেছে যথাক্রমে ৫৫৮টি ও ৫৪০টি ফ্লাইট। রাস্তায় বন্ধ বাস-ট্রেন চলাচল। এ দিন সকালের পর থেকে বুলেট-সহ সমস্ত ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। জাপানের একটি মেটিরিওলজিক্যাল এজেন্সি জানিয়েছে, এই ঝড়ের তাণ্ডবে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত বছর বিধ্বংসী সামুদ্রিক ঝড় ‘জেবি’-র ধ্বংসলীলায় বিপর্যস্ত হয়েছিল পশ্চিম জাপান। ঝড়, ভারী বৃষ্টি, ধস, বন্যা এবং তাপমাত্রার হঠাৎ বদলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল জাপানের বহু শহর। মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের। ১৯৫৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জাপান। সেবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। নিখোঁজ হন অনেকে। তবে আবহবিদরা জানিয়েছেন, হাগিবিসের তাণ্ডব অতীতের সব ঘূর্ণিঝড়ের থেকে অনেক বেশি হবে। অন্তত ১৪০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে এই ঘূর্ণিঝড়।
টাইফুন ‘হাগিবিস’-এর মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। উপকূল এলাকায় তৈরি আছে নৌবাহিনী। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বিমানবাহিনী ও উদ্ধারকারী দলগুলোকেও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত সরকারি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে বলে জাপানের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। সূত্র : এনডিটিভি ও দ্য ওয়াল।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক