করোনা নিয়ে চীনকে আড়াল করার অভিযোগে গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ব্যাপক ভাবে কথার আক্রমণ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে পাকাপাকি ভাবে অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
আজ তার পাল্টা জবাব দিয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণে রাশিয়া ‘‘আমেরিকা আর তাদের কিছু সঙ্গী দেশ রাজনীতি শুরু করেছে।’’ চীন-আমেরিকা-রাশিয়া ‘ত্রিকোণ’ বাগযুদ্ধ চলছেই।
গোড়া থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আক্রমণ করে আসছেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ, ভাইরাস সংক্রমণের উৎসস্থল চীন। কিন্তু সে সব নিয়ে যাবতীয় তথ্য গোপন করে আসছে তারা। আর তাদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কিছু দিন আগে ট্রাম্প এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সব চেয়ে বেশি অঙ্কের অনুদান দিয়ে আসে আমেরিকা। চীন তার ধারেকাছেও যায় না। এর পরেই গতকাল তিনি সরাসরি চিঠি লেখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাসকে।
যা আবার পরে টুইট-ও করেন তিনি। চিঠিতে ট্রাম্প লেখেন, ‘‘অতিমারি সামলাতে আপনি ও আপনার সংস্থা যে ভূমিকা নিয়েছে এবং যে ভাবে বারবার ভুল পদক্ষেপ করেছে, তার মূল্য গোটা বিশ্বকে চোকাতে হচ্ছে।’’
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সংস্থার ভূমিকায় কোনো ‘গুরুত্বপূর্ণ বদল’ না এলে গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য দেওয়া অনুদান বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, ‘‘ব্যবস্থাপনা আরও ভাল করার সুযোগ রয়েছে ঠিকই... এবং আমরা প্রস্তুত রয়েছি, আগের মতোই সক্রিয় ভূমিকা নিতে। কিন্তু শুধুমাত্র একটা দেশের রাজনৈতিক-ভূরাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের জন্য পুরনো যা রয়েছে, সব কিছু ভেঙে দেওয়ার পক্ষপাতী নই।’’
আরও বলেন, ‘‘আমেরিকা ও তার সঙ্গে অন্য কিছু দেশ উঠেপড়ে লেগেছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত যা কিছু নিয়ে রাজনীতি করার বিপক্ষে আমরা।’’
গোটা বিশ্বে সংক্রমণের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে আজ। মৃত্যু পেরিয়ে গিয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার। আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৯৩ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। সাম্প্রতিক কালে যা খুবই কম। রাশিয়াতে সংক্রমণ তিন লাখ ছাড়িয়েছে। কিন্তু মৃত্যুহার অনেকটাই কম। সে দেশে মারা গিয়েছেন মোট ২৯৭২ জন।
ইউরোপও ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। স্পেন, ইতালি, ব্রিটেনে নতুন করে বড় কোনো দুঃসংবাদ নেই। এক দিনে সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর মিলেছে আজ মেক্সিকো থেকে ৩৩৪ জন ।
এর মধ্যেই দীর্ঘ লকডাউনের পরে ‘দরজা’ খুলছে একাধিক দেশ। বাইরে অবশ্য অপেক্ষা করছে এক ‘নয়া স্বাভাবিক’ দুনিয়া। স্কুল খুলেছে, কাজ শুরু হয়েছে অফিসে, গণপরিবহণ ব্যবস্থাও চালু হয়েছে, বার-রেস্তরাঁতেও লোকে যাচ্ছেন কিন্তু সবটাই অন্য রকম। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মেনে লকডাউন পরবর্তী নতুন জীবন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস অবশ্য আরও বড় বিপদের আশঙ্কা করছেন। তার কথায়, ‘‘এ বার আফ্রিকায় ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে করোনাভাইরাস। শুধু তা-ই নয়, যার জেরে লক্ষ লক্ষ লোক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বেন।’’
এ পর্যন্ত জাতিসংঘের হাতে থাকা খবর অনুযায়ী, আফ্রিকার সব দেশে ঢুকে পড়েছে করোনা। মৃত্যু গুটি গুটি পায়ে ছুঁয়েছে ২৫০০। কিন্তু ‘এ সবে শুরু’ বলেও জানিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন