২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৪:০৬

সনাতন হিন্দু ভারতই ভারত নয়: অমর্ত্য সেন

অনলাইন ডেস্ক

সনাতন হিন্দু ভারতই ভারত নয়: অমর্ত্য সেন

প্রাচীন ভারতের শিক্ষাভাবনার আদর্শ অনুসরণ মানে কি স্রেফ প্রাচীন ভারতের একটি দিক তুলে ধরা? ২০২০-র নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে ওয়েবিনারের আসরে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এই প্রশ্নই ছুড়ে দিলেন অমর্ত্য সেন। প্রতীচী ট্রাস্টের উদ্যোগে আলোচনাচক্রে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, প্রাচীন ভারতের আদর্শ বলতে শুধু সনাতন শিক্ষার কথা মনে রাখব, কিন্তু ভারতের সামগ্রিক ইতিহাসের ধারা উপেক্ষা করব, এটা ঠিক নয়।

ভারতের ভাবাদর্শের এই বহমানতা প্রসঙ্গে চার্বাক দর্শন থেকে মুসলিম প্রভাবের কথাও মনে করান অমর্ত্য। তিনি বলেন, প্রাচীন ভারতে সনাতন ধর্ম যেমন ছিল, তেমনই লোকায়ত বা চার্বাকের পরম্পরাও ছিল। তার মধ্যে ঈশ্বরহীনতা, ধর্মহীনতা বা ধর্মবিরোধিতা এবং সম্পূর্ণ যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া কখনওই সেই আদর্শের একটি ধারার প্রতি একনিষ্ঠ থাকা নয়।

নতুন শিক্ষানীতির আদর্শে একদেশদর্শিতা প্রসঙ্গে অমর্ত্যের ব্যাখ্যা, পশ্চিমি দেশগুলির স্কুলশিক্ষা শুধু বাইবেলের গসপেল আঁকড়ে বসে থাকা নয়, গ্যালিলিওর মতো বিজ্ঞানীদের কথাও তাতে গুরুত্বপূর্ণ। এরই সূত্র ধরে ভারতের বিভিন্ন পরতকে পড়ার গুরুত্বের কথা বলেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এ দেশে মুসলিম প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। আবার প্রাচীন হিন্দু ভারতেও গোটা দেশ, বিশেষত বাংলা বা আসাম এক রকম ছিল না।

শিক্ষা নীতি-সংক্রান্ত আলোচনায় এ দিন প্রধানত প্রাথমিক ও প্রাক-স্কুল স্তরের শিক্ষা নিয়েই কথা বলেন শিক্ষাবিদেরা। নতুন শিক্ষা নীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা বা অঙ্গনবাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্রটি অত্যন্ত করুণ। এ দেশের স্কুলস্তরে বেসরকারি শিক্ষার দিকে ঝোঁকের প্রবণতা নিয়েও অমর্ত্য আক্ষেপ করেছেন। অর্থনীতিবিদ একে শিবকুমার, শিক্ষাবিদ অনিতা রামপাল, গণেশ দেবী প্রমুখের বিশ্লেষণের উপরে মন্তব্যে তিনি বলেন, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ছাড়া বাকি প্রায় সব দেশের থেকেই বেসরকারি স্কুলশিক্ষার দিকে ঝোঁক বেশি ভারতের। বাংলাদেশও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সাহায্যে এই খামতি অনেকটা সামলেছে।

অমর্ত্যর মতে, শিক্ষা বেসরকারি স্কুলনির্ভর হলে, তা পণ্য হয়ে ওঠে। সরকারি পরিসেবা বা নাগরিকের অধিকার থাকে না। এই বিষয়টা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তো বটেই, জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়া, চীন সকলেই বুঝেছে। সরকারি স্কুলের নেটওয়ার্ক গড়ার কাজটা খুব জরুরি।

একেবারে প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি যত্নে স্কুলশিক্ষাকে আরও বেশি সর্বজনীন করে তোলার উপরেও জোর দিয়েছেন অমর্ত্য।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে পঞ্চম শ্রেণিতেও অর্ধেকের বেশি পড়ুয়া ঠিকঠাক পাঠ্য বই পড়তে অভ্যস্ত নয়। শিক্ষা ক্ষেত্রের এই ‘কেলেঙ্কারি’ নিয়েও সরব হন অমর্ত্য। তার কথায়, ‘‘কেন, শিক্ষার এই হাল— এ প্রশ্ন বার বার করতে হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর