পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘরে বাইরে নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ঘরোয়া নির্যাতনের শিকার হন। সম্প্রতি চীনে মহিলারা তাদের স্বামী বা সঙ্গীর দ্বারা মারাত্বকভাবে সহিংসতার শিকার হয়ে খবরের শিরনামে আসছেন। নির্যাতিতা বিচারে দাবিতে মুখ খোলার জন্য দ্বিগুন মাত্রায় নির্যাতিত ও সহিংস হামলার মুখোমুখি হচ্ছেন।
চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ম্যা জেনি নামে একজন প্রাক্তন সাংবাদিক ঘরোয়া সহিংসতার বিষয়ে 'অ্যানাদার ল্যামো' শিরোনামের একটি প্রবন্ধে তিব্বতের জনপ্রিয় ভিডিও ব্লগার যাকে তার স্বামী লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময় নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তার জের টেনে নিজের অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। ট্রাম্যান স্টোরির নামে চীনা ভাষায় প্রকাশিত নিবন্ধে, ম্যা জেনি তার স্বামীর বিরুদ্ধে তার সাত বছরের বিবাহের সময় প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা এবং হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, 'যে মুহুর্তে ও আমার মাথায় আঘাত করে, আমি কাপড় নষ্ট করে ফেলি। এরপরও রাতভর এবং পরের দিন সকাল পর্যন্ত মারধর চলতে থাকে। আমার জামাকাপড় রক্তে ভিজে গেছিল এবং রক্ত কোথা থেকে বের হচ্ছে সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আমি অনেক কষ্টে আমার মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়েছিলাম। তবে আমি পুলিশকে ফোন করিনি। আমার বাচ্চারা ঘুমিয়ে ছিল। আমি আমার এক মহিলা কর্মচারীকে ফোন করে বলেছিলাম যে আমাকে প্রচুর মারধর করা হয়েছে'। ম্যা লিখেছেন, 'তার স্বামীর দ্বারা এটিই তার উপর প্রথমবার আক্রমণ ছিল'।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ম্যা বেইজিং নিউজ এবং সাউদার্ন মেট্রোপলিস ডেইলি সহ বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট পত্রিকার জন্য সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে তিনি তিব্বতি মালভূমির এক মধু চাষী জিয়া ড্যাচাংকে বিয়ে করার জন্য সাংবাদিকজীবন ছেড়ে দেন, জিয়া ড্যাচাং-এর সঙ্গে তার একটি সাক্ষাত্কারের সূত্রে দেখা হয়েছিল তার।
ম্যা জেনি তার স্বামীর হাতে সহিংসতার কথা প্রকাশের পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহানুভূতি পেয়েছেন। ম্যা'র নিবন্ধটি ভাইরাল হওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থনের পাশাপাশি সংশয়েরও জন্ম দিয়েছে।
অনেকে মন্তব্য করে প্রশ্ন করেছেন যে, 'ম্যা একজন দৃড়মনা, সুশিক্ষিত মহিলা হয়েও কেন তার সঙ্গীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেননি'। অনেকে অনুমান করেছেন যে, 'ম্যা তাদের তিন সন্তানকে নিজের হেফাজতে নেওয়ার আইনি লড়য়ে তার স্বামীর থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করছেন'।
ম্যা- এর অভিযোগের পাল্টা জবাবে তার স্বামী জিয়া ড্যাচাং চীনা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে তিনি ম্যা'র উপরে কখনো আক্রমণ করেননি। ২০১৮ সালে ম্যা স্বামী জে- এর বাসা ছেড়ে তার বাচ্চাদের নিয়ে শহরে চলে এসেছিলেন।
চীনা সংস্কৃতিতে ক্ষতিগ্রস্থ দোষারোপের শিকার হন এবং ক্ষতিকারী সহনুভূতি পান। গৃহনির্যাতন থেকে বেঁচে ফেরাদের মানসিক আঘাত ভয়াবহ হতে পারে।
একজন ওয়েইবো ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সত্য প্রকাশের সময় ম্যা এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা সম্পূর্ণ অন্যায়। এটা দেখে আমার দুঃখ হয়েছে যে যখন তিনি তার নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে কথা বলতে এগিয়ে এসেছিলেন, তখন তাকে সাহায্য ও সম্মানের পরিবর্তে সন্দেহ ও লজ্জার মুখোমুখি করা হয়েছিল'।
সূত্র: সুপ চায়না।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির