স্টেশনে বসে সারাদিন ৪ ভাইবোন মিলে কমলালেবু বিক্রি করতেন। পড়াশোনার কথা কল্পনাতেও আসেনি, যা আয় হতো তা দিয়েই চলত সংসারের খরচ।
মা-ও দিনভর ব্যস্ত থাকতেন টুকিটাকি কাজ করে উপার্জন করতে। সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফেরার পথে ছেলেমেয়েদের স্টেশন থেকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন।
ওই ৪ ভাইবোনের মধ্যে এক জন আজ কোটিপতি! সামান্য কমলালেবু বিক্রেতা থেকে ৪০০ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে উঠেছেন!
তার নাম পিয়ার খান। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নাগপুরে। শুধু কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে নিজের ব্যাংক ব্যালান্স বাড়াননি তিনি, এই মহামারী পরিস্থিতিতে অক্সিজেন দান করে নাগপুরের বাইরে এবং ভিতরে একাধিক হাসপাতালে সাহায্যও করেছেন।
ইতিমধ্যে ৮৫ লাখ টাকার ৪০০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি।
পিয়ার খানের জন্ম নাগপুরের তাজবাগের বস্তিতে। ১৯৯৫ সাল থেকেই তিনি নাগপুর রেল স্টেশনের বাইরে কমলালেবুর ঝুড়ি নিয়ে বসতেন। যাতায়াতের পথে যাত্রীরা তার থেকে কমলালেবু কিনতেন।
১৮ বছর বয়স হলে গাড়ি চালানো শিখে কমলালেবু বিক্রির পাশাপাশি একটি কুরিয়ার সংস্থায় গাড়ি চালানোর কাজ পান।
কিন্তু এই কাজ বেশি দিন করতে পারেননি তিনি। কারণ কয়েক দিনের মধ্যেই উড়িষ্যায় এক গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। ওই সংস্থার কাজ হারান তিনি।
পরে একটি অটো নিয়ে চালাতে শুরু করেন। সঙ্গীতের প্রতিও তার ঝোঁক ছিল। তাই কিবোর্ড বাজাতে শিখেছিলেন। নাগপুর মেলোডি মেকারস নামে একটি ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্তও হয়েছিলেন।
এভাবেই দিন চলছিল তার। কিন্তু মাথায় মাঝে মধ্যেই নড়েচড়ে বসত ব্যবসায়িক বুদ্ধি। প্রথমে নিজের গানের সরঞ্জাম বিক্রি এবং টাকা ধার করে একটি ছোট বাস কেনেন। কিন্তু সে ব্যবসা টেকেনি।
২০০৪ সালে তিনি ট্রাক কেনার মনঃস্থির করেন। তখন তার বয়স ২৪ বছর। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। নাগপুরের বিশ্ব ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানেজার তাকে ফিরিয়ে দেন।
অবশেষে অন্য একটি ব্যাংক থেকে তিনি ১১ লাখ টাকা ঋণ পান। সেই টাকায় একটি ট্রাক কেনেন। মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ঋণ পরিশোধও করে দেন।
সেই একটি ট্রাক থেকে আজ ১২৫টি ট্রাকের মালিক তিনি। এ ছাড়াও আরও ৩ হাজার ট্রাক ভাড়া নিয়ে চালান পিয়ার খান।
আসাম রোড ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে সংস্থাও খুলে ফেলেছেন পিয়ার খান। ভারতের ১০টি জায়গায় অফিস রয়েছে তার।
তার সংস্থায় কাজ করেন অন্তত ৫০০ মানুষ। দেশের বাইরেও যাতায়াত করে তার ট্রাক।
কিন্তু কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও মাটির কাছাকাছি থাকতেই পছন্দ করেন পিয়ার। সাহায্য করার চেষ্টা করেন দুঃস্থদের।
ভারতজুড়ে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সঙ্কট দেখে চোখ বুজে থাকতে পারেননি তিনি। ইতিমধ্যেই ৮৫ লাখ টাকার অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছেন। বিনা ভাড়ায় গাড়ি পরিসেবাও দিয়ে চলেছেন তিনি। সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/কালাম