২৩ জুলাই, ২০২১ ২১:১৩

ইরাক-চীন চুক্তি বাস্তবায়ন মার্কিন সরকারের জন্য বড় আঘাত

অনলাইন ডেস্ক

ইরাক-চীন চুক্তি বাস্তবায়ন মার্কিন সরকারের জন্য বড় আঘাত

ইরাকের তেল-রপ্তানির ৪৪ শতাংশই যায় চীনে

ইরাক ও চীনের বিশেষ কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা এ তথ্য দিয়েছেন।

ইরাক ও চীন যখন এ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল তখন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আদেল আবদুল মাহদি। বিশ বছর মেয়াদি এই সমঝোতা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইরাক তার তেল রপ্তানি করবে চীনে এবং বিনিময়ে চীন ইরাকের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। খবর-পার্সটুডের।

চীন ও ইরাক উভয় দেশের জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি। বিশেষ করে তা চীনের প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলোর জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ জন্যই চীনের প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকা বাগদাদ-বেইজিং চুক্তি যাতে বাস্তবায়ন করা না হয় সে জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। যেসব কারণে ২০১৯ সালে আদেল আবদুল মাহদির সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন উসকে দেয়া হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তার সরকারের পতনও ঘটেছিল সেসবের অন্যতম ছিল এই বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর।

চীন ভেটো ক্ষমতার অধিকারী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য হওয়া ছাড়াও বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি। অন্য দেশগুলোতে পুঁজি বিনিয়োগের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে দেশটির। তাই পশ্চিম এশিয়ার ইরান ও ইরাকসহ বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলেই রয়েছে চীনের উপস্থিতি। পশ্চিম এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের সঙ্গেই চীনের নানা ধরনের সুসম্পর্ক বেড়েই চলেছে এবং এইসব দেশ চীনা বিনিয়োগকে খুবই খুশি মনে স্বাগত জানাচ্ছে। 

ইরাক এখন জ্বালানী তেল-রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক। গত মে মাসে ইরাক দৈনিক ত্রিশ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করেছে। তাই ইরাকের জ্বালানী খাতে বিনিয়োগ করাটা চীনের জন্য খুবই লাভজনক ও জরুরি। চীনা কোম্পানিগুলো এখন ইরাকের জ্বালানী বাজারে ব্যাপক মাত্রায় বিনিয়োগ করেছে। 

ইরাকের তেল-রপ্তানির ৪৪ শতাংশই যায় চীনে। তাই চীন ইরাকের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য-শরিক। দৈনিক ৮ লাখ ব্যারেল ইরাকি তেল আমদানি করছে চীন। ইরাক সরকার মনে করে চীনা বিনিয়োগের সুবাদে দেশটির অর্থনৈতিক নানা সমস্যা সমাধান করা যাবে এবং দেশটির অবকাঠামোরও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে চীনের মাধ্যমে। চলতি বছরের ইরাকি বাজেট অনুযায়ী চীনা কোম্পানিগুলো ইরাকে এক হাজার স্কুল নির্মাণ করবে এবং ইরাকের কয়েকটি প্রদেশে ১০০ শয্যা-বিশিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালও নির্মাণ করবে। এ ছাড়াও চীন ইরাকের মিইসান প্রদেশে চার হাজার আবাসিক ভবন তৈরি করবে এবং অর্ধ-সমাপ্ত কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের কাজও সুসম্পন্ন করবে। 

ইরাককে চীনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পের শরিক করাই চীনের লক্ষ্য। ইরাক চীনের সহায়তায় তার বেশ কয়েকটি বন্দরের উন্নয়ন এবং এসব বন্দরগামী সড়ক ও রেলপথ সংস্কার করতে আগ্রহী। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে ইরাকের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বও চীনের কাছে অপরিসীম। ইরাকে চীনের উপস্থিতির ফলে এ অঞ্চলের চীনের প্রভাব অনেক বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে, ইরাকের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী হতে পারলে দেশটি এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।  মোট কথা ইরাকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতিতে বাগদাদ-বেইজিং চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। 

বেশ কিছুকাল আগে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির বাস্তবায়ন যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তখন এ চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় ওয়াশিংটন বাগদাদের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ মার্কিন সরকার এ ধরনের চুক্তির প্রধান বিরোধী পক্ষগুলোর অন্যতম। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর