চীনজুড়ে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, তরুণরা কারখানার চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। আর অভিবাসী শ্রমিকরা বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া দেশটিতে বয়োবৃদ্ধের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্মক্ষম মানুষ কমে গেছে।
চলতি বছর চীনা পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, কারখানার মালিকরা বলছেন যে, তারা হ্যান্ডব্যাগ থেকে প্রসাধনী সবকিছু তৈরি করে এমন কাজ পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সংক্রমণের হার খুব কম হলেও কিছু অভিবাসী শ্রমিক চীনের শহর বা কারখানায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কাজে যাচ্ছেন না। অন্য তরুণরা সেবা-শিল্পের চাকরির দিকে ঝুঁকছেন, যাতে বেশি বেতন দেয়।
কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাকরি আছে। শ্রমিকদের বেতনও বাড়ছে হু হু করে। তা সত্ত্বেও তরুণরা এই খাতের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে না। তাদের কাছে সেবাখাতে কাজ করা এখন অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও অনেকটা এরকম পরিস্থিতি দেখা গেছে। দেশটিতে মহামারির সময় লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারালেও কিছু কিছু নিয়োগদাতা পর্যাপ্ত শ্রমিক খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তবে চীনের সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদি ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তনেরও প্রতিচ্ছবি। দেশটি দীর্ঘদিন এক সন্তান নীতি আঁকড়ে ধরে ছিল। এর ফলে সেখানে শ্রমের যোগান কমে গেছে। ২০১৬ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে এক সন্তান নীতি থেকে বেরিয়ে আসে। এসব প্রবণতা চীনের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির হারকে গুরুতর হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। শ্রমিক সংকটের ফলে চীনের জন্য সস্তায় পণ্য সরবরাহ দুরূহ হয়ে পড়বে।
গুয়াংঝু শহরের একটি প্রসাধন কারখানার মালিক ইয়ান ঝিকিয়াও। কর্মচারীর অভাবে, বিশেষ করে ৪০ বছরের কম বয়সী কর্মচারীর অভাবে, তিনি এ বছর ক্রমবর্ধমান চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন বাড়াতে পারেননি। এমনকি বিনামূল্যে খাবার ও বাসস্থান সুবিধাসহ অতিরিক্ত মজুরির প্রস্তাব দিয়েও তরুণ শ্রমিক জোগাড় করতে পারেনি তিনি।
ইয়ান জানান, এ বছর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কর্মচারীদের বেতনও খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়নি।
এ সমস্যা সমাধানের আরেকটি উপায় আছে তার হাতে—বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা। ইয়ান বলেন, কাজের ব্যাপারে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। অধিকাংশের মা-বাবাই সচ্ছল হওয়ায় তাদের ওপর কাজ খোঁজার চাপ নেই।
কারখানা শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় চীনের অর্থনীতি আরেকটি সমস্যায় পড়ে গেছে। বিভিন্ন পেশায় চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেছে অনেক। এ বছর রেকর্ড ৯০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করছে। এর ফলে চীনের শ্রমবাজারের ভারসাম্য টালমাটাল হয়ে যাবে। গত মাসে চীনে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৬.২ শতাংশ।
কারখানা মালিকদের জন্য এসব তথ্য অবশ্য তেমন কোনো সুখবর বয়ে আনেনি। উৎপাদন খাতে কর্মচারীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেক কারখানা শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে কমে গেছে তাদের প্রফিট মার্জিন।
অ্যাপল ইনকরপোরেশনের বৃহত্তম সাপ্লায়ার ফক্সকন টেকনোলজি গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি গত মাসে ঝেংঝুতে তাদের এক কারখানায় নতুন কর্মচারীদের ৯ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত (১ লাখ ১৭ হাজার টাকা) বোনাস দেয়।
এশিয়ার অন্যান্য দেশে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সেসব দেশ থেকে অর্ডার বাতিল হয়ে চীনা কারখানাগুলোতে চলে আসছে। এর ফলে কিছু কোম্পানি বেতন বাড়িয়ে হলেও কর্মচারী নিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে নতুন অর্ডার নিয়েও লাভের মুখ দেখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেক কারখানা মালিক। এখন তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শ্রমিক খুঁজে পাওয়া।
সূত্র : দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ