আল-কায়েদা’র মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক, সহিংস ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি হিসেবে বিবেচিত তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) আগস্টের শেষ দিকে কাবুল বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে। এতে আমেরিকান সেনা নিহতের পাশাপাশি শতাধিক সদস্য আহত হন। মূলত তালেবানের সঙ্গে আইএস-এর বিরোধ আফগানিস্তানের পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
তালেবানের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার চরমপন্থি দলগুলোর - যারা দেশটিতে শরীয়া আইন চালু করতে চান- মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেটনো মারসুদি এক টুইট বার্তায় লেখেন, আগস্টের শেষ দিকে কাবুল বিমানবন্দরে হামলার কয়েক দিন আগে তিনি তালেবানের সিনিয়র নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানেকজাইয়ের সাথে কাতারের রাজধানী দোহায় সাক্ষাত করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তান যেন সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য পরিণত না হয় সেটি নিশ্চিত করা।
ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় বিদেশি পর্যটকরা হামলার টার্গেট হন। আর এটি করে মূলত দেশটির চরমপন্থি দলগুলো। এছাড়াও বর্তমানে আফগানরা দেশটির শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় দল হয়ে উঠেছে। জেমাহ ইসলামিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান একটি চরমপন্থি দল। এই দলের কয়েক ডজন সদস্যকে পুলিশ আগস্টে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ অভিযোগ আনে, তারা দেশটির স্বাধীনতা দিবসের দিনে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। আর এই চরমপন্থি গোষ্ঠীর বেশ কিছু নেতা তালেবানের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এদিকে, আইএস-এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ার দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে তালেবান। বিষয়টি মালয়েশিয়ান পুলিশ নিশ্চিতও করেছে। আর ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা সচিব বলেছেন, তারা স্থানীয় সন্ত্রাসী দলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক আছেন। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তানে জামেহ ইসলামিয়া ও আল-কায়েদার মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য সমস্যায় রয়েছে। লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের মতো ভারত বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো জম্মু ও কাশ্মীরে হামলা চালাতে আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও তেহরিক-ই-তালেবান আফগানিস্তানে নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে নতুন করে পাকিস্তানে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে।
বাংলাদেশও সন্ত্রাসের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তালেবানের উত্থান কেবল আফগানিস্তানে আল-কায়েদা নয়, বাংলাদেশে জমিয়াতুল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং নিও-জেএমবির মতো চরমপন্থি দলগুলোকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলাম ও হেফাজতে ইসলামের মতো দলগুলো তালেবানের উত্থানে স্বপ্ন দেখছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর