৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৭:১৮

মুম্বাইয়ে সেই ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের সংযোগ

অনলাইন ডেস্ক

মুম্বাইয়ে সেই ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের সংযোগ

গত কয়েক দশক ধরে ভারত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। ঠিক ১৩ বছর আগে, পাকিস্তানি সহায়তায় মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় কয়েকশ নির্দোষ ব্যক্তি নিহত, পঙ্গু ও আহত হন। এ ঘটনায় পুরো বিশ্ব হতবাক হয়ে যায়। মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকী ভারতের মানুষদের যন্ত্রণাদায়ক ও দুঃখজনক স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ করে যাদের স্বজনরা এই হামলায় হতাহত হয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকটি স্মৃতি বিভীষিকা, ট্রমা ও দুঃখে ভরা। 

একদিকে পাকিস্তানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং অন্যদিকে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা ইসলাম ও জিহাদের কথা বলে এসব কর্মকাণ্ডের বৈধতা অর্জন করেছে। পাকিস্তান বিগত কয়েক দশক ধরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এবং এখনও করছে- এটা গোটা বিশ্ব জানে। পাকিস্তান শুধু সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়নি বরং তাদের অর্থ সহায়তা এবং সুরক্ষা দিচ্ছে। এছাড়াও জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের চোখে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীদের দেশটিতে আশ্রয় দেওয়ার নজিরবিহীন রেকর্ডও রয়েছে। 

জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ২৫তম রিপোর্টে ইঙ্গিত করা হয়েছে, আফগানিস্তানে যোদ্ধারত বিদেশিদের মধ্যে কমপক্ষে সাড়ে ৬ হাজার পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছে। জৈশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম) এবং লস্কর-ই-তাইয়েবা জঙ্গি সংগঠন দু’টি বিদেশী যোদ্ধাদের আফগানিস্তানে আনার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তান ১৯৮০ দশক থেকে সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে। দেশটিতে অবস্থানরত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের মোটা দাগে পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- এক শ্রেণির সন্ত্রাসীরা বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম চালায়। আবার কেউ আফগানিস্তান, কেউ ভারতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ এবং শিয়া বিরোধী সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কেউ কেউ জড়িত।

আশঙ্কার কথা হচ্ছে পাকিস্তান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কারণে বর্তমানে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসের কেন্দ্র হিসাবে পুনরায় আবির্ভূত হচ্ছে। এরপর আবার আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সহিংসতা বেড়েছে। এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে, যখন পাকিস্তান মানবিক সঙ্কট ও জনগণের দুর্দশার কথা বলে বিশ্ব নেতৃত্বকে তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করছে।

পাকিস্তানের কারণে ভারত কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। ভারত বরাবরের মতো এসব হামলাকে শক্তভাবে প্রতিহত করেছে। বিপরীতে পাকিস্তান এসব সন্ত্রাসীদের নিজ দেশে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছে। ফলে পাকিস্তানের প্রয়োজনে সন্ত্রাসীরা ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কারণে পাকিস্তানে বিভিন্ন নামে সন্ত্রাসীরা বেড়ে উঠছে। পাকিস্তানের এই রাষ্ট্র-সন্ত্রাস সংযোগের কারণে আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান ঘটেছে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলটিকে আরও একটি মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।

এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সন্ত্রাসীদের দমন করার পরিবর্তে তাদের সন্তুষ্ট করতে চাইছে। দীর্ঘমেয়াদে যা শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়া নয় বরং বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে। তাই এখনই পাকিস্তানকে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ে তাজ হোটেল ও ছত্রপতি শিবাজি রেলওয়ে স্টেশনসহ প্রায় ১২টি স্থাপনায় একযোগে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এ হামলায় ১৬৬ জন নিহত হন। এই হামলার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবাকে দায়ী করে আসছে ভারত।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর