১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী ভারতের প্রতিটি নাগরিকদের করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
পাশাপাশি ১০ জানুয়ারি থেকে কো-মর্বিডিটি সম্পন্ন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের বুস্টার টিকা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মী ও করোনা যোদ্ধাদেরও দেওয়া হবে ওই বুস্টার টিকা। শনিবার রাতে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি এসব কথা বলেন।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে তিনি বলেন, ‘করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে গোটা বিশ্বে ভিন্ন অভিমত রয়েছে। ভারতের বিজ্ঞানীরাও এই বিষয়টির ওপর কড়া নজর রাখছে এবং তারা এর ওপর কাজ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা গত ১১ মাস ধরে যে কাজ করে যাচ্ছে ও সমগ্র বিশ্বের পরিস্থিতির ওপর বিচার করে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা হলো ভারতজুড়ে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের করোনা টিকাকরণ চালু হবে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে। এই সিদ্ধান্ত করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশকে যেমন শক্তিশালী করবে তেমনি স্কুল-কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের চিন্তাও কমে যাবে।’
তিনি আরও বলেন ‘দেশে যারা স্বাস্থ্যকর্মীরা ও করোনাযোদ্ধা আছেন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশকে সুরক্ষিত রাখতে তাদের বড় অবদান রয়েছে। সেই দিক মাথায় রেখে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদেরও করোনার বুস্টার ডোজ শুরু করা হবে। আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হবে। সেই সাথে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সী ও যাদের কো-মর্বিডিটি আছে তাদেরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে তাদেরও বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজ শুরু হবে ১০ জানুয়ারি থেকে।’
একটি পরিসংখ্যান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। সেই থেকে গত ১১ মাস ধরে গোটা দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ১৪১ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৬১ শতাংশের বেশি মানুষ ভ্যাকসিনের দুইটি ডোজই পেয়েছেন এবং ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ একটি ডোজ পেয়েছেন। গোয়া, উত্তরাখন্ড, হিমাচলপ্রদেশের মতো রাজ্যে শতকরা শতভাগ একটি ডোজ দেওয়ার কাজ হয়েছে।’ সেই সাথে তার ঘোষণা খুব শিগগিরই ন্যাজাল ভ্যাকসিন এবং বিশ্বের প্রথম ডিএনএ ভ্যাকসিন শুরু হবে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘১৮ লাখ আইসোলেশন বেড, ৫ লাখ অক্সিজেন সাপোর্টেড বেড, ১ লাখ ৪০ হাজার আইসিইউ বেড এবং বাচ্চাদের জন্যও প্রায় ৯০ হাজার বেড তৈরি আছে। গোটা দেশে ৩ হাজারের বেশি পিএসএ অক্সিজেন প্ল্যান্ট কাজ করছে। ৪ লাখ অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক ব্যবহার, নিয়মিত ব্যবধানে হাত ধোয়াসহ একাধিক পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।’
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাবো যে আতঙ্কিত হবেন না। তবে সাবধান থাকবেন। সতর্ক থাকবেন। কারণ করোনা এখনো চলে যায়নি। তাই বিজ্ঞানসম্মতভাবে আমাদের এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সেক্ষেত্রে মাস্ক পরা ভুললে চলবে না এবং বারে বারে হাত ধোয়া ভুলে গেলেও চলবে না। ভাইরাস যেমন মিউট্যান্ট হচ্ছে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ছে।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই