মেদিকা সীমান্ত থেকে দেড় ঘণ্টা দূরত্বের শহর যেশোফ। মেদিকা প্রত্যন্ত গ্রাম। সেখানে নেই কোনো হোটেল বা রেঁস্তোরা। তাই নাগরিক সুযোগ সুবিধা সব হচ্ছে যেশোফে। এই যেশোফের খাবারের দোকান থেকে হোটেল; এমনকি ছোট স্টেশনারী দোকান সব জায়গায় একই কথা লেখা- ইউক্রেনের নাগরিক হলে বিশেষ ছাড়!
পোল্যান্ডের মানুষ এমন আতিথেয়তায় বরণ করে নিয়েছেন বিপদগ্রস্ত দেশের মানুষদের। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চেষ্টা করছেন কষ্ট লাঘব করতে।
মেদিকা মিউনিসিপ্যালিটির অধীনে একটি বড় ক্যাম্প করা হয়েছে যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে সেনাবাহিনী। সেই ক্যাম্পে কর্নেল লীনা দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই প্রতিবেদককে বলেন, ইউক্রেন থাকা আসা মানুষেরা আমাদের অতিথি, এদেরকে আমরা শরণার্থী হিসাবে দেখছি না।
একই চিত্র দেখা গেলো মেদিকা সীমান্তে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাস এসে দাঁড়ানো। শরণার্থীরা বর্ডার ক্রস করে ঢুকছেন, বিভিন্ন চ্যারিটির খাবার খাচ্ছেন, টয়লেট ব্যবহার করে, ফ্রেশ হয়েই উঠে পড়ছেন বাসে। শরণার্থীরা যেদেশে যেতে চান সেই দেশের বাসে উঠে পড়লে হলো। যেমন জার্মানির বাসে উঠলে সেটা জার্মানিতে চলে যাবে সরকারের ক্যাম্পে। সেখান থেকে শরণার্থী মর্যাদা দিয়ে দেয়া হবে ফ্ল্যাট বা বাসস্থান। ব্যবস্থা করা হবে কর্মসংস্থানের। এছাড়া শরণার্থী হিসাবে প্রতিমাসে সরকারের দেয়া কিছু টাকাও পাবেন। এভাবে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের বাসও রয়েছে সেখানে।
এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেভাবে শরণার্থীদের বরণ করে নিচ্ছে সেখানে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা চলছে। ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস যুক্তরাজ্যের শরণার্থী নীতিকে ‘লজ্জাজনক’ বলেছে। শরণার্থীবিষয়ক বেশ কিছু দাতব্য সংস্থাও যুক্তরাজ্য সরকারের পরিকল্পনাকে অস্বচ্ছ ও অপর্যাপ্ত বলে সমালোচনা করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালানোর পর যুক্তরাজ্য দেশটিকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। এর মধ্যে রয়েছে জরুরি অস্ত্রসহায়তা, ট্যাংক–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো। অপর দিকে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর মতো যুক্তরাজ্যও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা করেছে। কিন্তু ইউরোপের অন্য দেশগুলো যেখানে ইউক্রেনের শরণার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করছে, সেখানে যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
উল্টো যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য যেসব বাস্তুচ্যুত ইউক্রেনীয় ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরা দীর্ঘ অপেক্ষা আর লালফিতার দৌরাত্ম্যের শিকার হচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের ভিসার জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ এখানেই শেষ নয়। ভিসা পেতে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাঁদের। কখনো কখনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির শত শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কিংবা পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের ভিসা সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক আবেদন করছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির নাগরিকদের জন্য যুক্তরাজ্যের অপ্রতুল সহায়তা ইউরোপের অন্য সহযোগীদের দৃষ্টি এড়ায়নি। গত শুক্রবার ইইউর বিশেষ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের এমন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। ওই সম্মেলনে মাখোঁ বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার শরণার্থী বিষয়ে প্রচলিত নিয়ম চালু রেখেছে। এতে বোঝা যায়, ব্রিটেনে যেতে চাওয়া ইউক্রেনীয়দের নিতে তেমন একটা আগ্রহী নন তারা।
ব্রিটিশ সরকারের এমন কঠোর পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ দেশটির সাধারণ নাগরিকেরাও। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির জনগণের বড় একটি অংশ জরুরি ভিত্তিতে ইউক্রেনের নাগরিকদের দেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা