ইউক্রেনে গণহত্যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় রাশিয়াকে। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এই প্রস্তাবেও ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত। এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়াবিরোধী আটটি প্রস্তাবের সবগুলোতেই ভোটদানে বিরত থাকল ভারত।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনে আমেরিকার নেতৃত্বে আনা রাশিয়াবিরোধী প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ৯৩ দেশ। বিপক্ষে ভোট দেয় ২৪ দেশ। ভোটদানে বিরত থেকেছে ৫৮ দেশ, এর মধ্যে রয়েছে ভারতও। ৪৭ সদস্যের এই কাউন্সিল থেকে সাময়িকভাবে রাশিয়াকে বরখাস্ত করার জন্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদানকারী রাষ্ট্রগুলোর দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। যারা ভোটদানে বিরত থেকেছে, তাদের সংখ্যা এখানে কোনও পক্ষেই গণ্য হয় না।
ভোটদানে বিরত থাকার পিছনে যুক্তি দিয়ে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি টি তিরুমূর্তি বলেছেন, “ভারত শান্তির পক্ষে। ভারত চায় অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ হোক এবং কূটনীতি ও সংলাপের মাধ্যমে সংঘাতের সমাধান হোক।”
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিতে এ সংক্রান্ত বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। লিখেছেন বিবিসি নিউজ অনলাইন, ইন্ডিয়ার সম্পাদক বিকাশ পান্ডে।
এতে বলা হয়েছে, আবারও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘ প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা মধ্য দিয়ে ভারত তার চিরাচরিত ভূমিকাই তুলে ধরেছে।
এটা এখন স্পষ্ট যে, দিল্লি ইউক্রেনের উপর তার নিরপেক্ষতার অবস্থানের সাথে কোনওভাবেই আপোস করতে ইচ্ছুক নয়।
এক্ষেত্রে ভারত সরাসরি রাশিয়ার সমালোচনা করেনি। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞাগুলো পাশ কাটিয়ে রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেলের জন্য কীভাবে অর্থ পরিশোধ করা যায়, সেই উপায়গুলোও খুঁজছে দেশটি।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল পশ্চিমারা কতদিন ভারতের অবস্থানকে নিরপেক্ষ হিসেবে ধরে নেবে।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জোরালো কিছু বক্তব্য এসেছে।
একজন কর্মকর্তা সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়ার সাথে ভারতের ‘আরও বেশি কৌশলগত সম্পর্কের পরিণতি’ হবে ‘ব্যাপক এবং দীর্ঘমেয়াদী’।
জাতিসংঘে ভোটদানে বিরত থেকে ভারত তার সময়-পরীক্ষিত মিত্র মস্কোর পাশে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু দেশটির বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য পশ্চিমাদেরও প্রয়োজন।
তবে উভয় দিকে ভারসাম্য বজায় রাখা দিল্লির জন্য কূটনৈতিক দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলেছে বলে বিবিসির ওই বিশ্লেষণে মন্তব্য করা হয়। তাই, এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন, ইউক্রেন ইস্যুতে ভারসাম্য অবস্থান বজায় রাখা কি সত্যি কূটনৈতিক দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে ভারতের জন্য? সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/কালাম