দীর্ঘ দিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন। পার্টিগেট কেলেঙ্কারি ও যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত দলীয় নেতার পক্ষে অনৈতিক অবস্থান নেওয়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। এরপর দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ক্ষমতার মসনদে বসেছিলেন লিজ ট্রাস।
কিন্তু অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় তাকেও পদত্যাগ করতে হয়। আবার নতুন প্রধানমন্ত্রীর খোঁজে ব্রিটেন।
এবার এখন পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক, যিনি বরিস জনসনের সরকারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তার পদত্যাগের পরই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির হিড়িক পড়ে যায় ব্রিটেন সরকারে। অবশেষ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন বরিস জন।
পরবর্তীতে তৎকালীন বরিস জনসন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সঙ্গে লড়াই করেন ঋষি সুনাক। শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান, প্রধানমন্ত্রী হন লিজ ট্রাস। কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি। অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় তিনিও পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
এখন আবার নতুন প্রধানমন্ত্রীর খোঁজে ব্রিটেন। এবারও এই পদের দৌড়ে আছেন সেই ঋষি সুনাক। তার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন থাকলেও তিনি ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে পথ অনেকটাই মসৃণ হয়েছে ঋষি সুনাকের জন্য। এখন তার সঙ্গে কেবল লড়াইয়ে আছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নারী নেত্রী পেনি মরড্যান্ট।
বরিস জনসন এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর দেশটির পত্রিকাগুলো সোমবার ঋষি সুনাকের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রথম পাতায় করেছে শিরোনাম ও খবর প্রকাশ করেছে ।
প্রথম পাতায় ঋষি সুনাকের বড় ছবি ছেপেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকা। খবরে বলা হয়েছে, বরিস জনসন নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ঋষি সুনাকের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ পরিষ্কার হলো।
প্রভাবশালী ‘ডেইলি মিরর’ ও ‘দ্য সান’ পত্রিকাও একই রকম শিরোনাম করেছে। এগুলোর শিরোনামে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ঋষি সুনাক।
ডেইলি এক্সপ্রেসের শিরোনামে বলা হয়েছে, বরিস সরে যাওয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অপেক্ষায় ঋষি সুনাক।
দ্য আই-এর শিরোনামে বলা হয়েছে, আইনপ্রণেতাদের চাপে প্রধানমন্ত্রী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বরিস।
আর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিস জনসন লড়াই থেকে সরে যাওয়ায় এখন সবার থেকে এগিয়ে ঋষি সুনাক। আইনপ্রণেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে তিনি।
সত্যি কি ‘বানানা রিপাবলিকে’ পরিণত হবে ব্রিটেন?
ব্রিটেনের বিরোধীদল ‘লেবার পার্টি’র এমপি ক্রিস ব্রায়ান্ট বলেছেন, ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হলে ব্রিটিশ নির্বাচন ব্যবস্থা বানানা রিপাবলিক তথা কলা প্রজাতন্ত্রের চেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক দেখাবে না।
ব্রায়ান্ট টুইটবার্তায় বলেন, “ঋষি সুনাক যদি কোনও সাক্ষাৎকার কিংবা সামান্য যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান, তবে জনসাধারণের ভোটের কথা বাদ দিন, ব্রিটিশ নির্বাচন ব্যবস্থা একটি বানানা রিপাবলিক তথা কলা প্রজাতন্ত্রের চেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক দেখাবে না। তার কোনও ম্যান্ডেট থাকবে না। আর এটা লজ্জাজনক।”
বানানা রিপাবলিক আসলে কী?
অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর একটি দেশ যখন রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত হয় তখন সেটিকে বানানা রিপাবলিক বলা হয়।
ইংরেজি অক্সফোর্ড শব্দকোষ অনুসারে একটি ‘বানানা রিপাবলিক (কলা প্রজাতন্ত্র)’ হল অর্থনীতি বিদেশি পুঁজি নিয়ন্ত্রিত একটি একক রফতানি পণ্যের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই শব্দটি রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল বিশেষতঃ কলার মতো একমাত্র রফতানি পণ্যের উপর নির্ভরশীল মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রায়ই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
‘বানানা রিপাবলিক’ (Banana Republic) এই শব্দজোড়া প্রথম ব্যবহার করেন আমেরিকান লেখক ও. হেনরি তার ‘Cabbages and Kings’ বইয়ে। হন্ডুরাসের তৎকালীন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি সেদেশের এই নাম দেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কাছে এই শব্দজোড়া জনপ্রিয়তা লাভ করে। ঔপনিবেশিক শাসনকাল অতিক্রম করে এলেও বানানা রিপাবলিকগুলো আসলে নয়া উপনিবেশ ব্যতীত কিছুই নয়। এখানকার লাখ লাখ জনগণ গুটিকয়েক ব্যক্তির কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো বানানা রিপাবলিককে অনেক বছর পিছিয়ে দেয়, সেই সাথে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করে। বানানা রিপাবলিক কখনোই ইতিবাচকতা প্রকাশ করে না, বরং একটি দেশের বন্দিদশাকেই ভিন্ন পদ্ধতিতে উপস্থাপন করে। সূত্র: বিবিসি, অক্সফোর্ড লার্নার্স ডিকশনারিজ, রোর মিডিয়া,
বিডি প্রতিদিন/কালাম