এই কিছুদিন আগেও রাশিয়া ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলা করতে পারে বলে জোরেসোরে আলোচনা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, পুতিনের পারমাণবিক হামলার হুমকি ফাঁকা বুলি নয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার পারমাণবিক হামলার ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার জন্য চাপ বাড়ছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া নিয়ে উজবেকিস্তানের সমরখন্দে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে পুতিনের দুই শক্তিশালী মিত্র শি চিন পিং এবং নরেন্দ্র মোদি যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, উদ্বেগ জানিয়েছেন। সম্প্রতি চীন পারমাণবিক হামলার বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।
কয়েক দিন আগে চীন সফর করেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং-এর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে শলৎজ এসেছিলেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াংয়ের সঙ্গে। সেই প্রেস কনফারেন্সে লি কেছিয়াং বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনে আর কোনো পরিস্থিতির অবনতি (এসকালেশন) দেখতে চাই না।’ এটাকেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে পারমাণবিক হামলার বিরুদ্ধে চীনের অবস্থান এবং আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে।
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে দাঁড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়াকে টিকে থাকতে বড় ভূমিকা পালন করেছে চীন ও ভারত। সুতরাং, পুতিন চীনের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করবেন তেমনটি ভাবা এই মুহূর্তে একটু হলেও কঠিন।
পুতিন বর্তমানে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ স্থাপনা ধ্বংস করছেন। এ মুহূর্তে দেশটির ৪০ শতাংশের মতো বিদ্যুৎ স্থাপনা ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিদ্যুৎকেন্দ্র হামলার পর ইউক্রেন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনে যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও সংকট থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আসন্ন শীতে ইউক্রেনের জন্য বিদ্যুৎহীন থাকা চরমতম বিপর্যয় তৈরি করবে। শীতের তীব্র কষ্ট তো আছেই, সঙ্গে আছে বিদ্যুৎ-সংকটের সঙ্গে যুক্ত পানির অভাব।
আমেরিকায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফল যদি ডেমোক্রেটিক দলের বিরুদ্ধে যায়, চরম মূল্যস্ফীতি আর মন্দাক্রান্ত ইউরোপ যদি এই শীতে অনেক বেশি কাবু হয়ে পড়ে, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের সমর্থন কমে যেতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন রাশিয়ার একধরনের আলোচনায় যেতে পারে, এমন সম্ভাবনা এখন বেশ ভালোভাবেই দেখা দিচ্ছে।
মূলত ইউক্রেনকে কাবু করতে পারমাণবিক হামলা করার মতো বাজি ধরতে পারতেন পুতিন, কিন্তু সেটা এখন তিনি অর্জন করছেন ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র হামলা করার মাধ্যমেই। শীতকাল না থাকলেও, কিংবা ইউক্রেন যদি এই শীতের পরও যুদ্ধে ভালোভাবে টিকে থাকে, তাহলেও বৈশ্বিক মন্দার পরিস্থিতিতে ‘চীন ফ্যাক্টর’-এর কারণে পুতিনের দিক থেকে একটি পারমাণবিক হামলার আশঙ্কা এখন আগের চেয়ে অনেক কম। সূত্র: আল জাজিরা
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল