শিরোনাম
২৬ মার্চ, ২০২৩ ১৮:১১
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

মারবার্গ ভাইরাস আক্রান্তদের অর্ধেকই মারা গেছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

অনলাইন ডেস্ক

মারবার্গ ভাইরাস আক্রান্তদের অর্ধেকই মারা গেছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ছবি বিবিসি বাংলার।

আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় মারবার্গ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তানজানিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অত্যন্ত সংক্রামক এই ভাইরাসটি ইবোলার সমগোত্রীয়, যার লক্ষণগুলো হলো জ্বর, পেশিতে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি এবং কখনও কখনও চরম রক্তক্ষরণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এই ভাইরাসের উৎপত্তি কীভাবে?
মারবার্গ ভাইরাস এর আগেও ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাসের সংক্রমিত রোগীদের অর্ধেকেরই মৃত্যু হয়েছে। ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৬৭ সালে। জার্মানির মারবার্গ, ফ্রাঙ্কফুর্টে এবং সার্বিয়ার বেলগ্রেডে একসাথে ছড়িয়েছিল ওই ভাইরাস। প্রথমে ৩১ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয় এবং সাতজনের মৃত্যু হয়।

উগান্ডা থেকে আমদানি করা আফ্রিকান সবুজ বানর ভাইরাসটির জীবাণু বহন করছিল। তবে ভাইরাসটি তখন থেকে অন্যান্য প্রাণীর সাথে যুক্ত হয়েছে। শূকর ও বাদুড়ও ভাইরাসটি বহন করে। যেসব মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে গুহা এবং খনিতে কাজ করেছে যেখানে প্রচুর পরিমাণে বাদুড় থাকে, সেসব মানুষের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যেসব দেশে দেখা গেছে সেগুলো হলো :

ইকুয়েটরিয়াল গিনি
ঘানা
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো
কেনিয়া
দক্ষিণ আফ্রিকা
উগান্ডা
জিম্বাবুয়ে
এছাড়া অ্যাঙ্গোলায় ২০০৫ সালে মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তিনশোরো বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়।

যদিও বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে গত ৪০ বছরে মাত্র দুজনের মৃত্যু হয়েছে মারবার্গ ভাইরাসে- এর মধ্যে একজন ছিলেন ইউরোপের এবং আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এই দুজনেই উগান্ডার গুহায় অভিযানে গিয়েছিলেন।

সম্প্রতি কোন কোন দেশে মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে?
তানজানিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কাগেরা অঞ্চলে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসের কারণে। আক্রান্ত তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং এই ভাইরাসের সান্নিধ্যে আরও ১৬১ জনকে খুঁজে বের করছে কর্তৃপক্ষ।

ফেব্রুয়ারিতে গিনিতে এই ভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাব শুরু হয় তারই ধারাবাহিকতায় তানজানিয়ায় এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গিনিতে এই ভাইরাসে সংক্রমিত নয়জনের মধ্যে সাতজনেরই মৃত্যু হয়। এছাড়া আরও ২০ জন রোগীর বিষয়েও অনুসন্ধান চালাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ।

আরও যেসব দেশে মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে :

২০২২ সালে ঘানায়: ৩ জন শনাক্ত, ২ জনের মৃত্যু
২০১৭ সালে উগান্ডায়: ৩ জন শনাক্ত, ৩ জনের মৃত্যু
২০১২ সালে উগান্ডায়: ১৫ জন শনাক্ত, ৪ জনের মৃত্যু
২০০৫ সালে অ্যাঙ্গোলায়: ৩৭৪ জন শনাক্ত, ৩২৯ জনের মৃত্যু
১৯৯৮-২০০০ সাল ডিআর কঙ্গোতে: ১৫৪ জন শনাক্ত, ১২৮ জনের মৃত্যু
১৯৬৭ সালে জার্মানি ও সার্বিয়ায়: ৩১ জন শনাক্ত, ৭ জনের মৃত্যু

মারবার্গ ভাইরাসের লক্ষণগুলো কী?
মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত

জ্বর
তীব্র মাথাব্যথা ও
পেশি ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
তিনদিন পর এসব উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত হয় –

পাতলা পায়খানা
পেট ব্যথা
বমি বমি ভাব
ও বমি।
অনেক সময় এই ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণও হয়। প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণের কারণে আট থেকে নয় দিনের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, “এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চেহারা দেখতে ‘ভূতের মতো’ টানা টানা লাগে, চোখকে গভীর স্থির মনে হয়, চেহারা থাকে অভিব্যক্তিহীন ও চরম অলসতায় আচ্ছন্ন”।

কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস?
আফ্রিকান সবুজ বানর এবং শূকর এই ভাইরাসের জীবাণু বহন করে।

মিশরের রুসেট নামের এক ধরনের ফল খাওয়া বাদুড়ও ভাইরাসটি বহন করে। ফলখেকো বাদুড় মারবার্গ ভাইরাসের প্রধান বাহক।

মানবদেহে মারবার্গ ভাইরাস প্রাণী থেকে ছড়ায় এবং শরীরের তরলের মাধ্যমে এক দেহ থেকে আরেক দেহে সংক্রমিত হয়।

এমনকি আক্রান্তরা সুস্থ হওয়ার পরেও তাদের রক্তে বা বীর্যে পরবর্তী বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত এই ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে।

প্রতিকার কী?
মারবার্গ ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই বা এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের টিকা আবিষ্কার হয়নি।

ডাব্লিউএইচও বলছে, ব্লাড প্রডাক্টস, ড্রাগ ও ইমিউন থেরাপি তৈরি করা হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন,লক্ষণগুলো দেখা দিলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

লক্ষণগুলোর দ্রুত চিকিৎসা হলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এছাড়া রক্ত প্রতিস্থাপনের জন্য ট্রান্সফিউশন ব্যবহার করেও চিকিৎসা দেওয়া যায়।

এই ভাইরাসকে কি থামানো সম্ভব?
‘গাভি’ নামের একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে , আফ্রিকার নাগরিকদের বন্যপ্রাণীর মাংস পরিহার করা উচিত।

ডব্লিউএইচও বলছে, এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের অঞ্চলগুলোতে শূকরের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।

ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষদের উপসর্গ শুরু হওয়ার এক বছর পর্যন্ত বা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষায় দুইবার নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করা উচিত।

যারা ভাইরাসে আক্রান্ত মরদেহ দাফন করেন - তাদের সংস্পর্শও এড়িয়ে চলা উচিত।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর