নতুন কিছুকে জানার ইচ্ছা বুক পকেটে করেই আন্টলান্টিকের গভীর জলে ছোট্ট সাবমেরিনে চড়ে ডুব দিয়েছিলেন পাঁচজন। তাদের একজন ব্রিটিশ ধনকুবের, আরেকজন পাকিস্তানে ধনকুবের বাবা ও তার ছেলে, একজন সাবমেরিন কোম্পানিটির সিইও এবং আরেকজন সাবমেরিনটির ফরাসি পাইলট। তাদের সবার আগ্রহ ছিল নতুন কিছু প্রত্যক্ষ করে রোমাঞ্চের সাধ নেওয়া। তবে সেই রোমাঞ্চ-নেশাই ডেকে এনেছে সলিল সমাধি।
গত রবিবার সাবমেরিন টাইটানে যাত্রা করেছিলেন এই পাঁচজন। যাত্রা শুরুর পৌনে দুই ঘণ্টায় পরই তারা নিখোঁজ হন। সব শেষ জানা গেছে ভয়ংকর বিস্ফোরণে এই অভিযাত্রীদের সবাই মারা গেছেন। এবার জেনে নেওয়া যাক এই জলের তলে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের পরিচয়।
স্টকটন রাশ
ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী ৬১ বছর বয়সী স্টকটন রাশ। তার ইচ্ছে ছিল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ বিজ্ঞানী এবং দর্শনার্থীদের কাছে আরো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার লেখাপড়া করেছেন তিনি। ওশানগেটের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ১৯৮১ সালে রাশ বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ জেট ট্রান্সপোর্ট-রেটেড পাইলট হয়েছিলেন। ১৯ বছর বয়সে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স জেট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ক্যাপ্টেনও হন।
প্রথমে তার ইচ্ছে ছিল মহাকাশে যাওয়ার। তবে পরে ইচ্ছার বাঁক বদলায়। রাশ এবারে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা করেন, যেখানে তার আগে কেউ যায়নি। ভেবে দেখেন একমাত্র গভীর সমুদ্রই হতে পারে তার এই ইচ্ছে পূরণের অন্যতম অবলম্বন।
হামিশ হার্ডিং
এই ব্রিটিশ ধনকুবের মহাকাশেই যাত্রা করেছিলেন। ব্রিটিশ অ্যাভিয়েশন টাইকুন হামিশ হার্ডিং বরাবরই বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অভিযানে আগ্রহী ছিলেন। অ্যাকশন অ্যাভিয়েশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে হামিশ হার্ডিং বিশ্বজুড়ে অসংখ্য রেকর্ড-ব্রেকিং ফ্লাইট এবং অভিযান পরিচালনা করেছেন। ৫৮ বছর হার্ডিংয়ের গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানের পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল।
২০২১ সালে সাগরের গভীরতম অংশ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চ্যালেঞ্জার ডিপের তলদেশে রেকর্ড ৪ ঘণ্টা এবং ১৫ মিনিট কাটিয়েছেন হার্ডিং। সেই অভিযানে তিনি সমুদ্রের গভীরতম অংশ বরাবর দীর্ঘতম দূরত্ব ভ্রমণের রেকর্ডও গড়েছিলেন।
পল হেনরি নারজিওলেট
৭৭ বছরের পল হেনরি নারজিওলেট টাইটানের এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন। তবে এবারই প্রথম নয়, ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক এই ডুবুরিকে অনেকেই ‘মিস্টার টাইটানিক’ বলে ডাকেন। টাইটানিক ডুবির ৭৫ বছর পর ১৯৮৭ সালে প্রথমবার জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজ চালানো হয়। সেই অভিযানেরও সদস্য ছিলেন এই ফরাসি ডুবুরি।
ই/এম গ্রুপের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, তিনি ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে ২২ বছর কাটিয়েছেন।
শাহজাদা ও সুলেমান দাউদ
এই সাবমেরিনে ছিলেন, ৪৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান দাউদ। পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর একটি এই দাউদ পরিবার।
শাহজাদা পাকিস্তানি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এনগ্রো কর্পোরেশনের ভাইস-চেয়ারম্যান। এটি একটি বড় সার ফার্ম। পরিবারের দাউদ ফাউন্ডেশনের সাথে কাজ করেন, একই সাথে এসইটিআই নামের- একটি ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গবেষণা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন যা বহির্ভূত প্রাণের সন্ধান করে।
শাহজাদা রাজা চার্লস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দুটি দাতব্য সংস্থা ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট এবং প্রিন্স ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনালেও সাহায্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ও ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব বাকিংহ্যামে পড়াশোনা করেন শাহজাদা। সেখানে ১৯৯৮ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল