তাইওয়ানে চীনের ‘আগ্রাসন’ ঠেকাতে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রতিরক্ষা কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল জাপান। এ বাবদ খরচ হবে সাড়ে ৪৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন। কিন্তু ডলারের বিপরীতে স্থানীয় এ মুদ্রার দর পতনে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে জাপান।
গত ডিসেম্বরে পরিকল্পনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ডলারের বিপরীতে ১০ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে ইয়েন। ডলারের হিসাবে এ খরচ ছিল ৩২ হাজার কোটি ডলার।
বিষয়টি সরাসরি জ্ঞাত ও পাঁচটি শিল্প সূত্রের সঙ্গে তিনজন সরকারি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তারা বলেছে, দুর্বল ইয়েনের কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে বিমান কেনা কমাতে শুরু করবে জাপান।
মুদ্রার ওঠানামার কারণে জাপান কীভাবে সামরিক কেনাকাটা পিছিয়ে দিচ্ছে- তার বিশদ বিবরণ আগে জানানো হয়নি। কেনাকাটার বিষয়ে অসংখ্য মিটিংয়ে অংশ নেওয়া এ আটজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি নেই।
২০২১ সালে গ্রীষ্মে এক ডলারের বিপরীতে পাওয়া যেত ১০৮ ইয়েন। ডিসেম্বরে কেনাকাটার পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় এ হার ধরা হয়। কিন্তু এ নভেম্বরের প্রথম দিকে মুদ্রার দাম ডলারের বিপরীতে ১৫১-এ নেমে আসে। গত মঙ্গলবার ব্যাংক অব জাপান দশক-দীর্ঘ আর্থিক কর্মসূচি শেষ করার ছোট একটি পদক্ষেপ নেয়। এতে বড়সড় অবম্যূলায়ন হয় ইয়েনের।
এ বিষয়ে স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সেন্টার ফর জাপানের প্রধান ক্রিস্টোফার জনস্টোন বলেন, আপাতত প্রভাবটি সামান্য। এ বিষয়ে প্রশ্ন নেই যে ইয়েনের দীর্ঘমেয়াদী অবমূল্যায়ন জাপানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জোর কমিয়ে দেবে।
তবে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা তাদের সামরিক সহযোগী টোকিওতে মার্কিন দূতাবাস বা পেন্টাগন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সবচেয়ে বড় ‘বাঁক বদল’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। প্রতিরক্ষা শ্বেতপত্র অনুসারে, পূর্ব চীন সাগরে তাইওয়ান ও দ্বীপগুলোর আশপাশে সম্ভাব্য সংঘাত মোকাবেলায় এ ব্যয় করা হবে। টোকিও তার মাটিতে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর সুরক্ষার দায়িত্বও ভাগ করে নেয়। স্ব-শাসিত তাইওয়ানে আক্রমণকারী চীনা বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাতে এই ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করবে ওয়াশিংটন।
গত ডিসেম্বরে কিশিদা বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করে জিডিপি ২ শতাংশ করার প্রতিশ্রুতি দেন। এর মাধ্যমে যুদ্ধ-ত্যাগকারী দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক ব্যয়ের দেশের দিকে পা রাখে। দুই বছর আগেও এমন পদক্ষেপ অসম্ভব বলে মনে করেছিলেন দেশটির আইপ্রণেতারা।
মূলত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর টোকিওর সামনে নতুন উদ্বেগ ছিল, এই হামলা তাইওয়ানে আক্রমণ করতে বেইজিংকে উৎসাহিত করবে কিনা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের জবাবে জাপানি ভূখণ্ডের কাছাকাছি জলসীমায় চীনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ নতুন ভয় জাগিয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের মহড়া ঘিরে উত্তেজনা।
তাইওয়ানকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চীন কখনোই সামরিক শক্তি ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করেনি। তবে জাপানের সামরিক ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিল- স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা প্রদর্শন করছে টোকিও। সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/আজাদ