১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১৫:৫৫
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকতে চাইছে না কাতার?

অনলাইন ডেস্ক

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকতে চাইছে না কাতার?

ফাইল ছবি

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করে দেখছে কাতার। এ কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মুহম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টার ক্ষেত্রে মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কাতারেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

তবে শেখ মুহম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি জানিয়েছেন, যারা রাজনৈতিক মুনাফা কামানোর চেষ্টা করছে তাদের শোষণ, নির্যাতন এবং অবমূল্যায়নের শিকার হয়েছে দোহা।

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে শান্তি আলোচনার বিষয়টি 'সংবেদনশীল পর্যায়' রয়েছে। যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার চেষ্টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে।

হামাস-সহ বাকি পক্ষের সঙ্গে কাতারের যে সম্পর্ক রয়েছে তা যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

এর আগে মধ্যস্থতাকারীরা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই সময়ে হামাসকে ৪০ জন নারী, শিশু এবং বয়স্ক বা অসুস্থ জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যা তারা সপ্তাহান্তে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করে।

কাতার এখন খোলাখুলিভাবে শান্তি আলোচনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার ভূমিকাও পুনর্বিবেচনা করছে।

কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মুহম্মদ বলেন, রাজনীতিবিদদের মুনাফা করার জন্য তাদের এই প্রচেষ্টা (যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বুধবার দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা দেখেছি সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য এই মধ্যস্থতাকে অপব্যবহার করা হয়েছে।”

“এর অর্থ হলো কাতার এই (মধ্যস্থতাকারী) ভূমিকার ব্যাপক মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছে। আমরা এমন একটা পর্যায়ে রয়েছি যেখানে মধ্যস্থতার বিষয়টিকে মূল্যায়ন করে দেখছি এবং সেখানে (মধ্যস্থতায়) দলগুলি কীভাবে কী করবে তাও পর্যালোচনা করে দেখছি।”

তিনি কোনো ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ না করলেও মার্কিন কংগ্রেসের ভেতরে কিছু সমালোচক কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, হামাসের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করছে না কাতার।

যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত সাম্প্রতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামাসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছে ‘যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা (হামাস)।’

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় চলমান ভয়াবহ যুদ্ধ বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কাতার।

এই সংঘাত বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবাননের ভূখণ্ড থেকে উত্তর ইসরায়েলের একটি গ্রামের দিকে আসা ‘অ্যান্টি ট্যাংক’ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আঘাতে তাদের ১৪ জন সেনা আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জনের আঘাত গুরুতর।

ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ জানিয়েছে, আরব আল-আরামশে এলাকায় একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালানো হয়েছিল। তার কারণ যে প্রতিশোধ, সে কথা জানিয়েছে তারা।

সাম্প্রতিককালে ইসরায়েলি হামলায় হেজবুল্লাহ কমান্ডার ও অন্যান্য যোদ্ধারা আহত হয়। তার প্রতিশোধ নিতেই পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিল ওই গোষ্ঠী।

হামাসের মতোই ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ হওয়া হেজবুল্লাহ গোষ্ঠী গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময় করে আসছে।

হামাস বন্দুকধারীরা ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি নজিরবিহীন হামলা চালায়। ওই ঘটনায় ১২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল (যাদের মধ্যে ছিলেন মূলত বেসামরিক নাগরিক) এবং ২৫৩ জনকে জিম্মি করা হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সংঘর্ষের সূত্রপাত।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের (হামাসকে) ধ্বংস করতে এবং জিম্মিদের মুক্তির উদ্দেশ্যে চালানো ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় ৩৩ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এদিকে, নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বদলে ১০৫ জন জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন নারী ও শিশু।

ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, গাজায় ১৩৩ জন জিম্মিকে আটক করে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজনকে যুদ্ধের আগেই বন্দি করা হয়েছিল। তবে জিম্মিদের মধ্যে ৩০ জনের ইতোমধ্যে মৃত্যু হয়েছে।

হামাস এক বিবৃতিতে শনিবার জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে জিম্মি বিনিময় চুক্তির বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে তবে সর্বশেষ যে প্রস্তাব তাদের দেওয়া হয়েছে সেটি তারা মানতে পারবে না।

গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের বাসস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে তারা অনড় রয়েছে বলেও জানিয়েছে হামাস।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক ইসরায়েলি আলোচনাকারী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার অভিযোগ হামাসের অবস্থান এটা নিশ্চিত করে যে তাদের (হামাসের) নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার গাজায় মানবিক চুক্তি এবং জিম্মিদের প্রত্যাবর্তন চান না। ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার যে আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছে তা বজায় রেখে লাভবান হতে চান তিনি। ওই অঞ্চলে সামগ্রিকভাবে সংঘাতও বাড়াতে চান তিনি।”

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর