এশিয়া-প্যাসিফিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার লিমায় পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে আগামী শনিবার বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দু’টির এই নেতাদের মধ্যে সম্ভবত শেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে তার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নীতি গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে গতকাল বুধবার মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বাইডেন ও শি সম্ভবত ‘দায়িত্বপূর্ণভাবে প্রতিযোগিতা পরিচালনা করার প্রচেষ্টার ব্যাপারে আলোচনা করবেন।’
আঞ্চলিক বাণিজ্য উদারীকরণের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে ২১টি অর্থনৈতিক দেশকে নিয়ে অ্যাপেক গঠিত হয়। অ্যাপেকভুক্ত দেশগুলো যৌথভাবে বিশ্বের জিডিপির ৬০ শতাংশ ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৪০ শতাংশেরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করে।
আসন্ন এ শীর্ষ সম্মেলনে অ্যাপেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখন এ আলোচ্যসূচি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে, যেমনটি আজারবাইজানে চলমান কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলন ও আগামী সপ্তাহে রিও ডি জেনেইরোতে একটি এ২০ শীর্ষ সম্মেলনেও একই ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ভিক্টর চা বলেছেন, ‘অ্যাপেক ও জি২০ নেতৃবৃন্দ কথা বলবেন এমন একজন বিশ্বনেতাকে নিয়ে কথা বলবেন, যিনি সেখানে নেই এবং তিনি হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।’
তিনি ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, এই শীর্ষ বৈঠকটি হবে ‘একটি বিষয়েই আর তা হলো বাণিজ্য ও জোট বিষয়ে পরবর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে কী আশা করা যায়।’
লিমা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে শি ও বাইডেনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, এ সম্মেলনে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র কর্মকর্তাগণ একত্রিত হবেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এতে যোগ দেবেন না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাইয়ের সাথে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় যোগ দেবেন। ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেছেন যে, তিনি চীনা আমেরিকান মার্কো রুবিওকে ব্লিংকেনের স্থলাভিষিক্ত করবেন।
ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডা, বিশ্ব বাণিজ্য, জীবাশ্ম জ্বালানী উত্তোলন ও বিদেশী সংঘাতের ব্যাপারে সুরক্ষাবাদী অবস্থানসহ ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন ও বাণিজ্য পর্যন্ত বাইডেন যে জোটগুলো তৈরি করেছিলেন সেগুলোর জন্য হুমকি।
রিপাবলিকান-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়াসে চীন থেকে পণ্য আমদানিতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে শাস্তিমূলক শুল্ক সম্ভবত আমেরিকান অর্থনীতির ক্ষতি করবে এবং দেশটির প্রতিবেশী ও ইউরোপের সঙ্গে তার বাণিজ্যকে প্রভাবিত করবে।
পশ্চিমা বিরোধী রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া চীনের মিত্র এবং দেশটি তাইওয়ানের উপর চাপ বাড়াতে তার নিজস্ব সামরিক ক্ষমতা তৈরি করছে।
চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে অবকাঠামো ও অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে ল্যাটিন আমেরিকায় তার প্রভাবকে প্রসারিত করছে।
জিনপিং বৃহস্পতিবার লিমার উত্তরে চাঙ্কেতে দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম চীনা অর্থায়নে নির্মিত বন্দর উদ্বোধন করবেন।
এদিকে বাইডেন শুক্রবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের সাথে বৈঠক করবেন। দেশ দু’টি এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র।
ট্রাম্পের বাণিজ্যিক নিশানায় শুধু চীনই নয়, অন্যান্য রাষ্ট্রও রয়েছে।
তিনি মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ বা তার বেশি হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। দেশটি সীমান্ত অতিক্রম করে ‘অপরাধমূলক তৎপরতা ও মাদক পাচার বন্ধ না করলে এই শুল্ক আরোপ করা হবে।
সূত্র : এপি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত