দক্ষিণ কোরিয়ার শাসক দলের প্রধান সতর্ক করেছেন যে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল যদি ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে দক্ষিণ কোরীয়রা ‘বড় ধরনের বিপদের’ মুখে পড়তে পারে। তাই তিনি অবিলম্বে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পিপলস পাওয়ার পার্টি (পিপিপি)-এর নেতা হান দুং-হুন শুক্রবার এক জরুরি বৈঠকে বলেন, তার দল ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ পেয়েছে যে মঙ্গলবার রাতে সামরিক আইন জারি করার সময় প্রেসিডেন্ট ইউন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের ‘রাষ্ট্রবিরোধিতার’ অভিযোগে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হান যা বলেন, তা তার পূর্বের অবস্থান থেকে একেবারে ভিন্ন। কারণ এর আগে তিনি বলেছিলেন যে তার দল বিরোধী দলের অভিশংসন প্রস্তাব আটকে দেবে।
বিরোধীরা গত বুধবার সংসদে ওই অভিশংসন প্রস্তাব পেশ করেছিল। তবে সেই অভিশংসন প্রস্তাব পাস করতে বিরোধীদের অন্তত আটজন শাসক দলের সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।
মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট ইউন যখন ‘সমস্যা তৈরি করছে এমন রাষ্ট্র বিরোধী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য’ সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন, তখন পুরো দেশ হতবাক হয়ে যায়।
কিন্তু দ্রুতই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে কোরিয়ার প্রতি বাইরের কোনো হুমকি নয়, বরং নিজেদের রাজনৈতিক সংকটই ছিল তার এই পদক্ষেপ গ্রহণের মূল কারণ।
এরপর পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ১৯০ জন সংসদ সদস্য দ্রুত সংসদে ঢুকে ভোট দিয়ে সামরিক আইন বাতিল করেন। এ সময় কিছু সংসদ সদস্যকে সংসদে প্রবেশ করার জন্য বেষ্টনী টপকাতে ও ব্যারিকেড ভাঙতেও দেখা যায়।
শুক্রবার হান উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে ইউন ক্ষমতায় থাকলে তিনি ফের সামরিক আইন জারি করার মতো ‘চরম পদক্ষেপ’ গ্রহণ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এসব কর্মকাণ্ড কোরিয়া ও কোরিয়ার নাগরিকদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।’
হান আরও জানান, তাদের দল জানতে পেরেছে যে গ্রেফতারকৃত বিরোধী রাজনীতিবিদদের দেশটির রাজধানী সিউলের দক্ষিণে গওয়াচনের একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি রাখার পরিকল্পনা ছিল।
তার বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে এখন প্রেসিডেন্টের নিজের দল হয়তো বিরোধী দলের শাসকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিতে পারে।
বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা উদ্বিগ্ন যে সেখানে পুনরায় সামরিক আইন জারি করার চেষ্টা হতে পারে।
বিবিসিকে তারা জানিয়েছেন, তারা সংসদ ভবনের কাছাকাছি থাকছেন যাতে অমন কোনো ঘোষণা এলে দ্রুত সংসদে গিয়ে সেই ঘোষণা বাতিল করার জন্য ভোট দিতে পারেন।
এদিকে, শাসক দলের সংসদ সদস্য চো কিয়ুং-তায় প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট ইউনের অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
চো বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব স্থগিত রেখে জনগণের পাশে থাকা নাকি সামরিক আইন জারিকারীদের মিত্র হওয়া-এটি রাজনীতিবিদদের জন্য একটি নৈতিক সিদ্ধান্তের পরীক্ষা।’
তিনি বলেন, ‘আশা করি পিপলস পাওয়ার পার্টির সব রাজনীতিবিদ জনগণের পক্ষে অবস্থান নেবেন।’
সিউলে টানা দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট ইউনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা এই বিক্ষোভের বিষয়ে তদন্ত করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান করে জনগণ পিপিপি’র আইনপ্রণেতাদেরকে হাজার হাজার বার্তা পাঠাচ্ছেন।
দ্য চোসুন ডেইলি লিখেছে, সংসদ সদস্য শিন সাং-বুম ফেসবুকে চার হাজারের বেশি মেসেজ পেয়েছেন।
স্থানীয় জরিপকারী প্রতিষ্ঠান রিয়েলমিটারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দশজনের মাঝে সাত জনের বেশি দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের পক্ষে।
অভিশংসন প্রস্তাব পাশ করতে ২০০ ভোট প্রয়োজন। বিরোধী দলের হাতে ১৯২টি আসন রয়েছে। অর্থাৎ, প্রস্তাব পাশ করার জন্য তাদের শাসক দল থেকে মাত্র আটজনের ভোট প্রয়োজন।
এমনিতে শাসক দলের সংসদ সদস্যের সংখ্যা ১০৮ জন।
সামরিক শাসন জারির চেষ্টা করার আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ইউন অজনপ্রিয়। দুর্নীতির অভিযোগ ও বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত সংসদের কারণে কার্যত একপ্রকার অচলাবস্থার মধ্যে ছিলেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত