গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জর্ডান ও মিশরে স্থানান্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনিরা। ট্রাম্পের এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূলের শঙ্কা বাড়িয়েছে বলে সমালোচকরা মনে করছেন।
এর আগে গতকাল শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, গাজা উপত্যকা "পরিষ্কার করার সময় এসেছে" এবং তিনি জর্ডান ও মিশরের নেতাদের ফিলিস্তিনিদের অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়। রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) জানায়, এই প্রস্তাব তাদের "লাল রেখা" লঙ্ঘন করবে। গাজার বাসিন্দারাও বলেছেন, তারা তাদের উপকূলীয় অঞ্চলে থেকে যাবেন।
মধ্য গাজার নুসেইরাত থেকে নাফিজ হালাওয়া নামে এক ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে বলেন, এটা মানুষ কখনোই মেনে নিতে পারবে না। দুর্বলরা তাদের ভোগান্তির কারণে হয়তো চলে যেতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার ধারণা... এটি একেবারেই অসম্ভব।
এলহাম আল-শাবলি নামে এক ফিলিস্তিনি নারীও ট্রাম্পের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, যদি আমরা যেতে চাইতাম, অনেক আগেই চলে যেতাম। আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতেই এখানেই থাকব।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা আমাদের নির্ধারিত সীমারেখার (রেড লাইন) সরাসরি লঙ্ঘন।
এটি বলছে, আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, ফিলিস্তিনি জনগণ কখনোই তাদের ভূমি বা পবিত্র স্থান ত্যাগ করবে না। আমরা ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালের বিপর্যয়ের (নাকবা) পুনরাবৃত্তি হতে দেব না। আমাদের জনগণ দৃঢ়ভাবে টিকে থাকবে এবং নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে যাবে না।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বজায় রাখার পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা গাজার শাসক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব চাওয়ার সঙ্গে সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজা শাসন করা ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বলছে, মার্কিন প্রশাসনকে এমন প্রস্তাব থেকে বিরত থাকতে হবে, যা ইসরায়েলের পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারবিরোধী। ফিলিস্তিনিরা সবচেয়ে বর্বর গণহত্যা এবং তাদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জানিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকেই এমনটি চলছে।
হামাসের পাশে থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) বলছে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব যুদ্ধাপরাধে উৎসাহ দেবে।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি বলেছেন, তাদের উচ্ছেদবিরোধী অবস্থান অটুট। আম্মান ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চায়, যাতে একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জনে সাহায্য করা যায়।
ট্রাম্পের গাজা খালি করার প্রস্তাব জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামকেও বিস্মিত করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটি অতি বাস্তবসম্মত নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, এ অঞ্চলের আরব দেশগুলো এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম