নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি ২৬টি সামাজিক যোগাযোগ ও অন্যান্য অ্যাপের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে রাজি হননি। এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া সহিংস বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন মারা গেছেন বলে সূত্র থেকে জানা গেছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রী প্রদীপ পাউডেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে প্রধানমন্ত্রী অলি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এবং তা পুনর্বিবেচনা করা সম্ভব নয়। সূত্রের খবর অনুযায়ী, একজন মন্ত্রী এই তথ্য জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নেপাল কংগ্রেসের কার্যালয়েও জরুরি বৈঠক হয়েছে, যেখানে অবিলম্বে সামাজিক মাধ্যমগুলো পুনরায় চালু করার দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। সূত্র অনুযায়ী, তিনি বলেন, অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। নৈতিক দায় স্বীকার করে আমি পদত্যাগ করছি। দল এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যম খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমি এ বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
প্রদীপ পাউডেলও বৈঠকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। মন্ত্রিসভায় কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় নেপাল কংগ্রেসের সভাপতি শের বাহাদুর দেউবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বালুওয়াটারে গেছেন।
সরকার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম ব্লক করার পর গত শুক্রবার থেকে ফেসবুক, ইউটিউব এবং এক্স-এর মতো কয়েকটি জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম নেপালে বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যবহারকারীরা ক্ষুব্ধ এবং বিভ্রান্ত।
বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের কাছে একটি সংরক্ষিত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, জল কামান এবং লাঠি ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
জেলা প্রশাসন কাঠমান্ডুর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেমন - পার্লামেন্ট, প্রেসিডেন্টের বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবস্থিত সিংহা দরবার এলাকায় কারফিউ জারি করেছে।
দেশের অন্যান্য জেলাতেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। এই সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ দ্রুত এবং স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র রভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে বলেন, নেপালে বিক্ষোভকারীদের হত্যা ও আহত হওয়ার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। আমরা দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং বলেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি গুলি ব্যবহার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নেপালে এর আগেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত বছর জুলাই মাসে অনলাইন জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের কারণ দেখিয়ে সরকার টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপটি ব্লক করে দেয়। এর আগে, টিকটক নেপালি নিয়ম মেনে চলতে রাজি হলে গত বছরের আগস্টে সরকার ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল