পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সাম্প্রতিক বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ১৯টি অস্ত্রবিহীন ড্রোনের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টায় প্রায় ১.৯ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলেছে ন্যাটো। যেখানে ড্রোনগুলোর সম্মিলিত মূল্য ছিল মাত্র ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার ডলার। প্রতিটি ড্রোনের দাম যেখানে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ডলার, সেখানে সেগুলো ধ্বংস করতে ৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার মূল্যের একেকটি করে এআইএম-৯ সাইডউইন্ডার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এই ঘটনা আধুনিক যুদ্ধে ন্যাটো জোটের প্রস্তুতির গুরুতর দুর্বলতা সামনে এনেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পোল্যান্ডের আকাশে ১৯টি নিরস্ত্র, ক্যামেরাহীন ডিকয় ড্রোন প্রবেশ করে। এগুলি ছিল সম্ভবত আত্মঘাতী হামলার আগে বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে পাঠানো ফাঁকি দেওয়ার জন্য তৈরি সস্তা সামগ্রী। ন্যাটোর সামরিক বাহিনী মাত্র ৪টি ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। বাকিগুলি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পোল্যান্ডের আকাশসীমা অতিক্রম করে। জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে একসময় এমনিতেই মাটিতে পড়ে যায়।
এই বিশাল অঙ্কের অর্থনৈতিক ক্ষতি ন্যাটোর প্রতিরক্ষা কৌশলের কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতা থেকে ন্যাটো এখনও শিক্ষা নেয়নি। যা থেকে বোঝা যায় যে তারা ২১ শতকের যুদ্ধের জন্য কতটা অপ্রস্তুত।
এই ঘটনার পরেই পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকোরস্কি ন্যাটোকে ইউক্রেনের আকাশে একটি নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার কথা বলে আগুনে ঘি ঢেলেছেন। তবে এই প্রস্তাবকে অনেকেই রাজনৈতিক নাটক হিসেবে দেখছেন। কারণ, সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এমন পদক্ষেপের অর্থ হবে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। ২০২২ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একই দাবি জানালে ন্যাটো তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। জোটের নেতারা মনে করেন এখনও পরিস্থিতি বদলায়নি।
পশ্চিমা ইউরোপের দেশগুলো মনে করছে যে এই ধরনের চরম প্রস্তাব তুলে তারা নিজেদের সামরিক শক্তিকে বড় করে দেখাতে চাইছে। এটি সম্ভবত রাশিয়াকে ভয় দেখানোর এবং একই সঙ্গে ইউরোপের অভ্যন্তরে রাশিয়া-বিরোধী জনমত চাঙ্গা করার একটি কৌশল। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মূল লক্ষ্য ইউরোপের অভ্যন্তরে রুশ-পন্থী ও ইউক্রেন-বিরোধী মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ করা।
এই সমস্ত আলোচনা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের কোনো চরম পদক্ষেপের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ন্যাটো জোটের মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট। ইউরোপীয় সদস্যরা ওয়াশিংটনের উপর চাপ সৃষ্টি করছে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ড্রোন অনুপ্রবেশের ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে মন্তব্য করেছেন। ফলে পোল্যান্ডের উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলা দাবিকেও সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
সূত্র: আরটি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল